প্রতিটি পরিবারে প্রবীণ সদস্যদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। তাঁরা পিতা-মাতা, দাদা-দাদি, নানা-নানি যে কেউ হতে পারেন। তাঁরা আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের ধারক। যখন এই প্রবীণরা, বিশেষ করে বাবা-মা, একে অপরকে হারান, তখন তাদের নিঃসঙ্গতা প্রকট হয়ে ওঠে। প্রবীণ সদস্যদের সেবা করা আমাদের জন্য জরুরি। একসময় যে বাবা-মা ছিলেন কর্মক্ষম এবং জীবনের সব দায়ভার বহনকারী, বয়সের কাছে এসে তারা হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গ। যখন একজন প্রবীণ সদস্যের জীবনসঙ্গী হারিয়ে যায়, তখন তাঁর নিঃসঙ্গতার অনুভূতি গভীর হয়ে ওঠে।
অথচ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পরিবারে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও অভাব। এটি খুবই দুঃখজনক। প্রবীণদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব মুখ্য হওয়াই উচিত। সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় একবার লিখেছিলেন, ‘জীবন যে এক রকমের নদী, সেখানে প্রবীণরা হলেন সেই নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ।’ তাদের জীবন অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ, কিন্তু শারীরিকভাবে তারা অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এ অবস্থায় প্রবীণদের প্রয়োজন হয় যত্নের। পরিবারের অঙ্গীকার এবং ভালোবাসা প্রবীণদের সঙ্গেই যুক্ত।
তাঁদের প্রয়োজন হয় যত্নের, সেবা এবং স্নেহের। তাঁদের কথা শুনতে হবে, তাঁদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এছাড়াও তাদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং যত্ন নেওয়া আমাদের নৈতিক কর্তব্য। বৃদ্ধ বয়সে এসে যখন একজন প্রবীণ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন পরিবারে অন্য সদস্যদের প্রতি তাদের আশা বেড়ে যায়। তারা যে সময়ের সঙ্গে প্রবাহিত হয়েছেন, জীবন সম্পর্কে তাদের যে জ্ঞান রয়েছে, তা আমাদের জীবনের প্রতিটি কোণে প্রাসঙ্গিক। প্রবীণদের গল্প, স্মৃতি, এবং জীবনদর্শন আমাদের পথ প্রদর্শক হতে পারে। ‘বৃদ্ধ মানুষের মধ্যে কিছু নেই, কিন্তু তাদের স্মৃতির জগৎ বিস্তৃত,’ বলেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ।
প্রবীণদের কষ্ট, তাদের অনুভূতি, আমাদের সবার অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত। তাদের সেবা করাটা শুধু একটি দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের মানবিকতার প্রমাণ। আমাদের উচিত প্রবীণদের যত্ন নেওয়া এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। এক কথায়, প্রবীণদের প্রতি দায়িত্ব পালন করা আমাদের সমাজের একটি মৌলিক কর্তব্য। আমরা যদি নিজেদের সময় এবং শক্তি তাদের সেবায় ব্যয় করি, তবে আমাদের সমাজ আরও সুন্দর এবং মানবিক হয়ে উঠবে।
সিলেট ক্রাইম রিপোর্ট/এস.এ