সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর ও বাংকার থেকে চলছে পাথর লুটপাট। পাথরের সাথে লীজ বহির্ভূত জায়গা থেকেও দিনরাত চলছে বালু উত্তোলন। এসব বালু আর পাথর সড়ক পথে যায় ধোপাগুলে। অবৈধ এই পাথর ও বালুর গাড়ি বৈধতা পায় পুলিশকে টাকা দিলে। যারা টাকা দেয়না তাদের গাড়ি ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
শনিবার (৫ অক্টোবর) ভোর ৫টায় সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে কুইক রেসপন্স টিম নিয়ে ডিউটিতে আসেন এসআই মিলন ফকির। তিনি সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ ৩ তলা এলাকায় ডিউটিতে ছিলেন। এ সময়ের মধ্যে সাদাপাথর ও বাংকারের পাথর বুঝাই ১০টি ট্রাক এবং বালু বুঝাই প্রায় ১৫টি ট্রাক টাকার বিনিময়ে পাস দেন তিনি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাথর বোঝাই ট্রাকগুলোর উপরে হালকা বালু দিয়ে নিয়ে যেতে বলে পুলিশ। যাতে দেখে মনে হয় বালু বোঝাই ট্রাক। এসব গাড়ি থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে তাকে। আর বালু বোঝাই ট্রাক থেকে দিতে হয়েছে ৫’শ থেকে হাজার টাকা। এ সময় এসআই মিলন ফকির লোহার স্পেন সহ একটি ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা আটক করেন। বাংকার থেকে চুরি করে নিয়ে আসা লোহার স্পেনের অটোরিকশা থেকে ১০ হাজার টাকা নেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, অটোরিকশাটি পুলিশকে দেখে ডাকঘর গ্রামের ভিতর চলে যায়। পুলিশ অটোরিকশাকে তাড়া করে ডাকঘর মসজিদের সামন থেকে আটক করে মেইন রোডে নিয়ে আসেন। পরে সেটাকে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গত ৫ আগষ্টের পর রাতদিন সাদাপাথর ও বাংকার থেকে চলছে পাথর হরিলুট। রাস্তায় ডিউটিতে থাকা পুলিশকে ম্যানেজ করে হরহামেশাই চলছে সাদাপাথর বোঝাই গাড়ি। যখন যে পুলিশ ডিউটিতে আসে তখন তাকে ম্যানেজ করেন ব্যবসায়ীরা। আবার অনেক পুলিশ সদস্য ডিউটিতে আসার আগেই ফোন করে জানান দেন পাথর ব্যবসায়ীদেরকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ধলাই সেতুর পূর্ব পাড় সংলগ্ন কয়েকটি ক্রাশার মিলে সাদাপাথরের স্তুপ রয়েছে। কলাবাড়ী এলাকায় সাদাপাথর ভাঙ্গে এমন ১৫টি ক্রাশার মিলে লক্ষাধিক ফুট পাথর রয়েছে। এসব পাথর ভাঙ্গার মেশিন থেকে সপ্তাহে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয় ব্যবসায়ীদেরকে। যার কারণে সেগুলোতে কখনো পুলিশ অভিযান দেয় না।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন গত মাসের শুরুতে কোম্পানীগঞ্জ থানার একজন পুলিশ এসে সবার উপর সাপ্তাহিক চাঁদা ধার্য করেন। সেই টাকা দেওয়ার কারণে তাদের মিলে আর পুলিশ অভিযান দেয় না।
এদিকে ধলাই সেতুর নিচ থেকে প্রতি রাতে শতাধিক লোক নৌকা দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। বালু ভর্তি প্রতি নৌকা থেকে ১’শ টাকা করে চাঁদা নেয় স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী। স্থানীয়দের অভিযোগ থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালেও ঝুকিপূর্ণ সেতুটি রক্ষায় পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অভিযুক্ত এসআই মিলন ফকিরের মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন, থানার সকল অফিসারদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে কেউ যাতে সাদাপাথরের গাড়ি যেতে না দেয়। আমরা সাদাপাথর ও অবৈধ বালুর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছি। শনিবার বিকালে পুলিশ অভিযান দিয়ে একটি সাদাপাথরের গাড়ি আটক করেছে।
সিলেট ক্রাইম রিপোর্ট / সুমা