সিলেট ক্রাইম রিপোর্ট: বাসাবাড়ি, রেষ্টুরেন্ট থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, বাসের টিকিট কাউন্টার, সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড- কী নেই এখানে? সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় বিশাল এলাকাজুড়ে নানা স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে রেলের জমি অবৈধভাবে দখল করে। যুগের পর যুগ ধরে এখানে চলে আসছে দখলদারদের রাজত্ব। দখল হয়ে যাওয়া বিপুল পরিমাণ জমি উদ্ধার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগ স্থানীয়দের। তারা বলছেন, সিলেটের শত শত একর রেলের জমি বেদখলে থাকলেও উচ্ছেদে নজর নেই রেল কর্তৃপক্ষের। মাঝে মাঝে লোকদেখানো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও পরদিনই আবার দখলদাররা ফিরে আসে আগের জায়গায়।
রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি অবৈধ দখলে থাকার কথা স্বীকার করেছেন খোদ সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মো. নুরুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি সময়ের আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রেলের অনেক সম্পত্তি অবৈধ দখলে রয়েছে। বারবার উচ্ছেদ করা হলেও লোকবলের অভাবে তা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। উচ্ছেদের পরদিনই দখলদাররা ফিরে আসছে। অবৈধ দখলে থাকা রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধার ও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের পঞ্চম বৃহত্তম রেল স্টেশন। ভারতের আসামে চা রোপণকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে ১৮৯১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানির মাধ্যমে বাংলার পূর্বদিকে রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু করে। ধাপে ধাপে এই রেলস্টেশনটি আধুনিকায়ন করা হয়। সিলেটে রেলওয়ের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে স্টেশনসহ আশপাশ এলাকায়। এসব সম্পত্তির মধ্যে রেলস্টেশন ছাড়া বেশিরভাগই অবৈধ দখলদাররা যুগের পর যুগ দখল করে রেখেছে। প্রভাবশালীদের কেউ কেউ রেলের জমিতে পাকা দালানকোঠা, টিনশেড, আধাপাকা ও কাঁচা ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। পাশাপাশি রেলস্টেশনের প্রবেশপথে রেলের জমিতে মসজিদ, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসের টিকিট কাউন্টার, সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত হওয়ায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিপুল পরিমাণের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
দখলদাররা জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে তারা বসবাস করে আসছেন এখানে। অনেকেই রেলের সম্পত্তি নিজেদের দাবি করলেও কোনো ধরনের কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। আবদুল কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার বাপ-দাদা এখানে বসবাস করেছেন। আমরাও বাস করছি। এ জায়গা নিয়ে রেলের সাথে মামলা রয়েছে। তবে তিনি কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি।
স্থানীয় আবদুর রহিম তফাদার বলেন, আমরা আজন্ম খোজারখলা, রেলগেটসহ আশপাশ এলাকায় মানুষের বসতি দেখে আসছি। কেউ কেউ নিজে বসবাস না করে বিভিন্ন স্থাপনা বানিয়ে ভাড়া আদায় করছেন। শুনেছি এই বিশাল সম্পত্তি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হলেও দখলমুক্ত করতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ।
পারাবত ট্রেনের যাত্রী মাখন মিয়া বলেন, রেলের সম্পত্তি সবসময়ই অবৈধ দখলে থাকতে দেখেছি। রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করার মুখেই মসজিদের সাইনবোর্ড, মুদি দোকান, বাসের টিকিট কাউন্টার, চায়ের দোকান এমনকি রেলস্টেশনের ভেতরে স্থায়ী হয়ে আসন গেড়েছে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড। এসব থেকে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাভবান না হলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হতো। কিন্তু নিজেদের লাভ হাতছাড়া যাতে না হয় সেজন্য লোকদেখানো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় মাঝে মাঝে।