• ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সিলেটে বাল্যবিবাহকে কেন্দ্র করে ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খু-ন

sylhetcrimereport
প্রকাশিত এপ্রিল ১৭, ২০২৫
সিলেটে বাল্যবিবাহকে কেন্দ্র করে ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খু-ন

নিজেস্ব প্রতিবেদক:: সিলেট সদর উপজেলার এয়ারপোর্ট থানাধীন খাদিমনগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের লুসাইন গ্রামে বাল্যবিবাহকে কেন্দ্র করে আপন ছোট ভাইয়ের আঘাতে বড় ভাই নিহত হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির নাম মো. মুজিবুর রহমান (৪৮) তিনি এয়ারপোর্ট থানার খাদিমনগর ইউনিয়নের লুসাইন গ্রামের মৃত মনো মিয়ার ছেলে।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) বেলা অনুমান সাড়ে ১২ টার দিকে ঘটনাটি নিহত মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ঘটে। এ খুনের মূল হোতা মুহিবুর রহমান ময়বুর সোদি আরব প্রবাসী।

সূত্র জানায়, নিহত মুজিবুর রহমানের সাথে তার পরিবারের ভাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ভূমি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিলো। এই ভূমি বিরোধের মধ্যেও নতুন করে সৃষ্টি হয় পরিবারের একটি বাল্য বিবাহের বিষয়। মূলত নিহত মুজিবুর রহমানের ভাতিজীকে বাল্য বিবাহ দেওয়া নিয়ে তাদের পারিবারিক সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে। নিহত মুজিবুর রহমানের ছোট ভাই মৃত ছাইফুর রহমানের এক মেয়েকে বাল্যবিবাহ দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।

সূত্র আরো জানায়, নিহত মুজিবুর রহমানের যে ভাতিজীকে বাল্যবিবাহ দেওয়া হয়েছে, সেই ভাতিজীকে তিনি লালন-পালন করে বড় করেছেন, তার ছোট ভাই ছাইফুর রহমান ১০ বছর আগে সৌদিআরবে রোড এক্সিডেন্টে মারা যান। তারপর হইতে নিহত মুজিবুর রহমান তার ভাইয়ের মেয়ের ভরনপোষণের দ্বায়িত্ব নেন।

জানা যায়, আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার সময় বাল্যবিবাহের বিষয় নিয়ে নিহত মুজিবুর রহমানের বাড়িতে এসে তাহার ছোট ভাই মুহিবুর রহমান ময়বুর এসে হামলা চালায়। এসময় মুজিবুর ও মুহিবুর রহমানের মাতা, ছাইফুর রহমানের স্ত্রী ও ময়বুর রহমানের স্ত্রী সরাসরি এ ঘটনায় অংশ নেন।

তাদের হামলায় নিহত মুজিবুর রহমানের স্ত্রী ছকিনা বেগম গুরুতর আহত হন। মাত্র ৫দিন আগে নিহত মুজিবুর রহমানের স্ত্রী অপারেশন সিজারের মাধ্যমে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। তার স্ত্রীকেও হামলাকারীরা ধাক্কা দিলে তাহার স্ত্রীর সেলাই ফেটে যায়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

হতাহতের ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সাথে সাথে ছুটে যান খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মো. দিলোয়ার হোসেন। এ সময় তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন, এবং দুই পক্ষের সাথে কথা বলেন। পরবর্তীতে তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে নিহত মুজিবুর রহমানের সর্বশেষ অবস্থার খোঁজ খবর নেন।

তবে গতকাল ১৫ এপ্রিল রাতে বাল্য বিবাহের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিহত মুজিবুর রহমানের ফেইসবুক আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস দেন, সেখানে তিনি স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধিকে বাল্য নিবাহের জন্য দায়ী করেন।
নিচে স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো;

জনপ্রতিনিধির কাজ কি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বাল্যবিবাহে সমর্থন দেওয়া?

৩ নং খাদিমনগর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার টাকার বিনিময়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বাল্যবিবাহে সমর্থন করে যাচ্ছে।

গত কয়েকদিন আগে অপ্রাপ্ত বয়স্ক একটি মেয়ের জন্মনিবন্ধনে ২ নাম্বারি করে বয়স বাড়িয়ে নতুন জন্মনিবন্ধন করে দিয়ে বাল্যবিবাহ হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে মেম্বার।

যেখানে ২০০৯ সালে মেয়ের জন্ম জালিয়াতি করে ২০০৫ সালে করে দিয়েছে। এবং মেম্বার সরাসরি এই জিনিসে সহায়তা করেছে এবং সত্যতা জানার পরেও টাকার বিনিময়ে জনপ্রিতিনিধি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করতেছে।

এখন জনপ্রতিনিধি যদি দেশের আইন না মেনে বাল্যবিবাহে সমর্থন করে তাহলে এসব জনপ্রতিনিধি থেকে কি আশা করা যায়?

এ বিষয়ে এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আনিসুর রহমান জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। এ ঘটনার বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ঘটনার মূলহোতা ময়বুরকে গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।