
নিজস্ব প্রতিবেদক:: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা এখন জেলার লুটপাট ও চোরাচালানের অন্যতম হটস্পটে পরিণত হয়েছে। একসময়ের নিরিবিলি জনপদ আজ প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের হাত ধরে ধ্বংসের মুখে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে হোটেল বয় থেকে শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে কোটিপতির তালিকায় ঢুকে পড়েছে। তাদের এই উত্থানের পেছনে রয়েছে চোরাচালান, বালু ও পাথর উত্তোলনের মতো পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড।
স্থানীয়রা বলছেন, গোয়াইনঘাট উপজেলার ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) ঘোষিত অঞ্চলেও প্রকাশ্যেই চলছে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাফলং, বাংলা বাজার, বালির হাওরসহ একাধিক এলাকা থেকে ড্রেজার মেশিন ও যন্ত্রদানব ব্যবহার করে উত্তোলন চলছে। এতে একদিকে যেমন হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ, অন্যদিকে কোটি কোটি টাকার অবৈধ আয় করে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী চক্র।
ইজারা ছাড়াই নদীর বুকে বসানো হয়েছে ড্রেজার। এখান থেকে তোলা বালু ও পাথর গোপনে মজুদ ও বিক্রি করা হচ্ছে। যার প্রভাবে নদীভাঙন শুরু হয়ে গেছে। তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনের ভয়, ফসলি জমি হারানোর আশঙ্কা আর আসন্ন বন্যায় বাড়িঘর বিলীন হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটছে মানুষের।
স্থানীয়দের দাবি, এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে বারবার আন্দোলন করলেও প্রশাসনের কাছ থেকে মিলছে না কার্যকর কোনো সহযোগিতা। যদিও উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, নিয়মিত অভিযান ও মামলা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী বলেন, “পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কার্যক্রম বন্ধে প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু অভিযান ও মামলা করা হয়েছে।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) ফেরদৌস আনোয়ার জানান, “আমরা নিয়মিত নজরদারি ও অভিযানে আছি। পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযানের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। দিনের পর দিন প্রকাশ্যে চলা এই কর্মকাণ্ডের পেছনে প্রশাসনের একটি অংশের নীরব সমর্থন বা উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন অনেকে।
চোরাচালান থেকে শুরু করে পরিবেশ ধ্বংসের লুটপাট ও বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে আত্মগোপনে থাকা জেলা পরিষদের এক সাবেক সদস্যের নাম উঠে এসেছে, যিনি এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস সিলেট ক্রাইম রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত আছে। উল্লেখ্য তাঁর ছত্রছায়ায় রাজনীতিবিদ, কথিত সাংবাদিক ও সন্ত্রাসীদের একটি বড় সিন্ডিকেট গোয়াইনঘাটে সক্রিয় রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, এই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ রুখতে চাই শুধু নিয়মিত অভিযান নয়, চাই প্রশাসনিক সদিচ্ছা ও কঠোর ব্যবস্থা। অন্যথায় ইসিএভুক্ত গোয়াইনঘাটের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যেতে পারে।