• ২০শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

৫ আগস্টের পর হাতবদল শ্যালক-দুলাভাই মিলে রাংপানি লুট

sylhetcrimereport
প্রকাশিত আগস্ট ১৮, ২০২৫
৫ আগস্টের পর হাতবদল শ্যালক-দুলাভাই মিলে রাংপানি লুট

সংগৃহিত

সিকারি ডেস্ক::  ভোলাগঞ্জ ও জাফলংয়ের ন্যায় দিনে-রাতেলুট হয়েছে জৈন্তাপুর উপজেলার অপরূপ সুন্দর রাংপানি পর্যটন কেন্দে। পাথর লুটের ঘটনায় বিবর্ণ রূপ এখন রাংপানির। ৫ আগস্টের আগে থেকে লুটপাট চলে আসলেও প্রশাসন ছিল নিরব। আর প্রশাসনের নীরবতা সাবল, খন্তি, কুদালের আঘাতে বিধ্বস্থ হয়েছে রাংপানি। গর্তের পর গর্ত রাংপানির টিলার পাদদেশ জুড়ে। ওপারে ভারত ঘেরা রাংপানি। এলাকাটি বিজিবির সংরক্ষিত।

এই রাংপানি নদীর ৪টি এলাকা থেকে পাথর উত্তোলন করে সৌন্দর্যের বারোটা বাজিয়েছে পাথরখেকোরা। রাংপানি ছাড়াও নদীঘেষা এলাকাগুলোর আরো ৪টি পয়েন্ট রয়েছে-শ্রীপুর কোয়ারি, আদর্শগ্রাম, খড়মপুর ও বাংলাবাজার ঘাট থেকে পাথর উত্তোলন করা হয়। ৫ আগস্টের আগে ও পরে শ্রীপুর রাংপানি নদীর কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন অব্যাহত আছে।

রোববার সরেজমিন রাংপানি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শ্রীপুর এলাকা দিয়ে পাথর উত্তোলন করতে যাওয়ার-আসারএকটি পথ রাংপানি। পথেই রয়েছে বিজিবির ক্যাম্প। ওপারে ভারতের সীমানা। অথচ চিকেন নেকের মতো কঠিন যাতায়াতের এই স্থানে পাথরখেকোরা পাথর উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। সাংবাদিকদের দেখে যেনো নদীপথে নৌকাযোগে আসা বিজিবির টহলদল হুইসেল বাজালে খানিকটা সময়ের জন্য তারা আড়ালে চলে যান। অতঃপর আবারো পাথর হরিলুটের যজ্ঞ চলে।

আর এভাবেই বিনাশ করা হয় রাংপানিতে প্রকৃতির বর্ণিল রূপে সাজিয়ে রাখা পাথর। আর সেই পাথরগুলো খাবলে নিয়েছে পাথরখেকোরা। বড় বড় গর্ত করে চুরি করে নেওয়া হয়েছে বড় পাথরগুলোও। অনুসন্ধানকালে স্থানীয়রা জানান, ৫ আগে এই রাংপানিসহ কোয়ারিগুলোর পাথর লুটে জড়িতদের অন্যমতম উপজেলা আওয়ামী লীগের ৩নং সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি আব্দল আহাদের শ্যালক আবদুর রাজ্জাক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলীর ভাই ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য ইসমাইল আলীসহ আরো
অনেকে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতন ও পট পরিবর্তনের পর শ্যালকের কাছ থেকে হাত বদল হয়ে পাথর কোয়ারিগুলো আসে আবদুর রাজ্জাক রাজার দুলাভাই উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি আবদুল আহাদের হাতে। তার সঙ্গে ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি আলমগীর হোসেন, ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর নুরুল ইসলাম ছাড়াও রয়েছেন জৈন্তাপুর ইউপি যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দিলদার হোসেনের নাম ওঠে আসে।

তারা অন্তত ৫০ নিজেদের লোকদ্বারা এই এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ ও পাথর উত্তোলন ও বিক্রয়ের টাকা নিয়ন্ত্রণ করেন। স্থানীয়ভাবে তাদেরকে সর্দার ডাকা হয়। স্থানীয় প্রশাসনকে সপ্তাহে টাকা দিয়ে আজো পাথর উত্তোলন অব্যাহত আছে। এ কারণে আশপাশের বাড়িঘরের ক্ষতি হচ্ছে, দাবি করেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও শ্রীপুর পাথর কোয়ারির সভাপতি আবদুল আহাদ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আবদুর রাজ্জাক রাজা আমার আত্মীয় লাগে। সে পলাতক রয়েছে। তবে রাংপানি ঘাটের সভাপতি ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি রফিক, আদর্শগ্রাম কোয়ারির সভাপতি আওয়ামী লীগের মানিক, সেক্রেটারি কয়েছ কমিটিতে আছেন। তাদের সঙ্গে জড়িত আছেন যুবদলের শাহজাহান ও আবদুর রাজ্জাক রাজা।

তবে রাজাকে নিজের দুঃসম্পকীয় শ্যালক দাবি করেন তিনি। অবশ্য মানিক এখন পলাতক। তাদের সঙ্গে জড়িত কয়েছ, নজরুল ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর। শংকর ঘাটে সোহেল এক চেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে, কুইট্টারঘাটে জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা ও জেলা ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান সমিতির নেতা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত মো. মহসীন রয়েছেন, দাবি করেন তিনি।

এছাড়া শ্রীপুর-করমপুর তিনি নিজে কমিটির সভাপতি রয়েছেন। তার সঙ্গে আছেন উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী দিলদার হোসেন এবং ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর নুরুল ইসলাম। তবে তারা পাথর তোলার বিরোধী বলে জানান।

২নং জৈন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, কোয়ারি পাথর ব্যবসায় আমি জড়িত নয়। ২০২৬ সাথে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন নিয়ে ফেল করি। আহাদ সাহেব কোয়ারির সভাপতি হিসেবে আছেন। আমার একটি ক্রাসার মিল ছিল। কিন্তু আমি পাথর ব্যবসা করি না। এছাড়া খাসিয়ারা গর্ত করে পাথর বিক্রি করে।
তিনি বলেন, ‘প্রশাসন লাইন দিলে এখানে পাথর উত্তোলনের কোনো সুযোগ নাই। কেননা, যাতায়াতের রাস্তা একটি। এখানে বিজিবি ক্যাম্প আছে। পুলিশতো আছেই। তারা যদি বলে, আজকে লাইন খোলা, তাহলে শ্রমিকরা গিয়ে পাথর উত্তোলন করে। নয়তো, একটা লোকও যেতে পারবে না। প্রশাসন সুযোগ দেয় বলে লোকজন পাথর তোলা হয়।

এ বিষয়ে জানতে ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর নুরুল ইসলাম পাথর লুটে জড়িত নয় দাবি করে বলেন, এক সময় ব্যবসা ছিল। এখন কোনো ব্যবসা নেই। কেউ দেখাইতে পারে, শাস্তি মাথা পেতে নেবো। বিগত ৩ বছর ধরে আমি পাথরের ব্যবসার সাথে নেই। কেই প্রতিহিংসা বশত; আমার নাম বলতে পারে।

শ্রীপুর পাথর কোয়ারির সেক্রেটারি ও উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী দিলদার হোসেন বলেন, মানুষ যদি আমার কথা বলে, তাহলে ইচ্ছে মতো আমার বিরুদ্ধে নিউজ করেন। নিজে পাথরে জড়িত না থাকার পক্ষে জিরো টলারেন্সে। অনেকে সেখান থেকে গিয়ে নৌকা দিয়ে পাথর আনে। তবে আমার নাম প্রতিহিংসামূলকভাবে ব্যবহার করা হতে পারে। আমি মূলত; তামাবিল কয়লা-পাথরের ব্যবসা করি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার লাবনীকে একাধিবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, পাথর লুটপাটের বিষয়ে আমরা সব দিকে খবর রাখছি। রাংপানি পর্যটন কেন্দ্রে লুটপাটের ঘটনায় অভিযান চালানো হবে বলেন তিনি।