
সিকারি ডেস্ক:: গোয়াইনঘাটে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) জাফলং থেকে পাথর লুটের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে খনি ও খনিজ সম্পদ আইনে মামলা হয়েছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোয়াইনঘাট থানায় মামলাটি (নং-২৯(৮)/২৫) হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, মামলাটির বাদী গোয়াইনঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুল মোনায়েম। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ পাথর লুটে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারে চেষ্টা করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৭, ৮ ও ৯ আগস্ট রাত একটা থেকে চারটা পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টির সময় জাফলং জিরো পয়েন্টে স্থানীয় পাথর চোরাকারবারিদের হুকুমে ৫০ থেকে ৬০টি বারকি নৌকা দিয়ে অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ পাথর চোরাকারবারি রাতের আঁধারে পাথর চুরি করে নিয়ে যায়। তারা ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের ৪০ থেকে ৫০ হাজার ঘনফুট পাথর চুরি করে। এসব পাথরের আনুমানিক দাম ৬০ লাখ টাকা। আসামিরা পরম্পরের যোগসাজশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে ইসিএভুক্ত ডাইকি-পিয়াইন নদীর জিরো পয়েন্ট থেকে পাথর চুরি করে বিভিন্ন জলযান ও স্থলযানের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় সরিয়ে নেয়।
এর আগে ১৫ আগস্ট কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি থেকে পাথর লুটের ঘটনায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ারুল করিম অজ্ঞাতনামা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, কিছু দুষ্কৃতকারী গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারি থেকে অবৈধ ও অননুমোদিতভাবে কোটি কোটি টাকার পাথর লুটপাট করেছে মর্মে বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যাঁরা এ ঘটনায় জড়িত রয়েছেন, তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর ও বালু উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) আছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে আছে আটটি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি, উৎমাছড়াসহ আরও ১০টি জায়গায় পাথর আছে। এসব জায়গা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে এসব পাথর আসে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের আটটি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।
সিলেটের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা সব সময় পাথর উত্তোলনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। বিগত পাঁচ বছরে তাঁরা নানাভাবে কোয়ারি ইজারা আবার চালুর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি। এ অবস্থায় রাতের বেলা আড়ালে মানুষ অবৈধভাবে পাথর তোলা হতো। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর টানা এক বছর দেদার পাথর লুটপাট করা হয়েছে।