• ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সিলেটে আবারো শুরু হচ্ছে কার্গো ফ্লাইট 

sylhetcrimereport
প্রকাশিত এপ্রিল ১৬, ২০২৫
সিলেটে আবারো শুরু হচ্ছে কার্গো ফ্লাইট 

সিকারি ডেস্ক:: ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে সিলেট থেকে আবারো শুরু হচ্ছে কার্গো ফ্লাইট। এর মধ্য দিয়ে সিলেট এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রবেশ করছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের যুগে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আগামী ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো সরাসরি কার্গো ফ্লাইট যাবে স্পেনে। ফ্লাইটটিতে ৬০ টন গার্মেন্টস পণ্য পরিবহন করা হবে। বাংলাদেশ বিমান এই সেবা চালুতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ।

প্রথম ফ্লাইটে কেবল গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হলেও প্যাকেজিং হাউজ করা গেলে দেশের যে কোনো স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা সবজিসহ যে কোনো পণ্য সিলেটে নিয়ে সহজে কার্গো ফ্লাইটে পাঠাতে পারবেন। এতে খরচ ও ভোগান্তি দুটোই কমবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ফ্লাইটটি ইউরোপমুখী হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়মাবলী (এসইসি-৩) পুরোপুরি মেনে চলা হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেশন এবং প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। সিলেট বিমানবন্দরের বর্তমান অবকাঠামো ও সরঞ্জাম দিয়ে এই সেবা শুরু করা সম্ভব হলেও ভবিষ্যতে আরও উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

সিলেট বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে ওয়ারহাউজ সুবিধা ও অন্যান্য অবকাঠামো নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে তারা আরও বড় আকারের ওয়ারহাউজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে একটি ওয়ারহাউজ থাকলেও ভবিষ্যতে বর্ধিত চাহিদা মেটাতে প্রাইভেট সেক্টর থেকে আরও ওয়ারহাউজ নির্মাণের কাজ চলছে বলে জানা গেছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ৬ মাসের মধ্যে এসব ওয়ারহাউজের কাজ শেষ হবে।

প্রাথমিকভাবে সিলেট থেকে একটি ফ্লাইটের শিডিউল করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ বিমান মনে করছে, নিয়মিত কার্গো ফ্লাইট না থাকলে বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড সেবা নিয়মিত রাখা কঠিন হবে। তাই এই সেবাকে টেকসই করতে নিয়মিত ফ্লাইট চালুর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ায় সিলেট বিমানবন্দরটি বিকল্প হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া গণমাধ্যমে বলেন, পণ্য রপ্তানিতে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা ও পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে নিরাপত্তাবিষয়ক সব কিছু প্রস্তুত করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৭ এপ্রিল প্রথম কার্গো ফ্লাইট উড়াল দেবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশন সাব-কমিটির চেয়ারম্যান হিজকিল গুলজার বলেন, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইটে পণ্য পরিবহনের দাবি ছিল ব্যবসায়ীদের। সেই দাবি পূরণ হতে চলছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে আটটি কার্গো এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম চলছে। এর সবই ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম জানান, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট শুরু করা হচ্ছে।

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গোফ্লাইট চালু করতে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কার্গো কমপ্লেক্স ও টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ২৭ এপ্রিলের ফ্লাইট চালু হতে যাচ্ছে। এজন্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কার্গো ফ্লাইট চালুর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট বন্ধ করা হয়েছিল। প্রবাসী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এটি চালুর আহ্বান জানিয়েছিলাম। এখন যেহেতু ফ্লাইট চালু হচ্ছে, আশা করছি দ্রুত প্যাকেজিং হাউজ নির্মাণসহ অন্যান্য জটিলতার অবসান ঘটাতে উদ্যোগী হবে সরকার।

বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ক্যাটেগরি ১-এ উন্নীত হয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) একটি প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করে এ ঘোষণা দেয়। এ দুটি বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো ফ্লাইট চালু হলে একদিকে ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে বাড়তি অর্থ খরচের হাত থেকে রক্ষা পাবেন ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই উদ্যোগ এমন সময় এলো, যখন ভারত তার ভূখণ্ড ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। ভারতের এ নির্দেশনা স্থগিতের চেষ্টা বা পাল্টা কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

একই সঙ্গে দেশের সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এরই অংশ হিসেবে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।