
সিকারি ডেক্স:: সিলেট মহানগরীর পাঁচটি স্থানে পথচারীদের নিরাপদ পারাপার নিশ্চিত করতে নির্মাণ করা হয়েছে ফুটওভার ব্রিজ। তবে বাস্তবে এগুলো জনসাধারণের কাজে না এসে পরিণত হয়েছে বখাটেদের আড্ডা ও মাদকসেবীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে। এমনকি কিছু এলাকায় এই ব্রিজগুলো ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
২০১৫ সালে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে প্রথম ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওই ব্রিজের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও চারটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয় নগরীর বিভিন্ন এলাকায়, যার মোট ব্যয় প্রায় ৫ কোটি টাকা।
তবে নগরবাসীর অভিযোগ, এসব ব্রিজ ব্যবহার করছে না সাধারণ পথচারীরা। বরং পরিকল্পনাহীনভাবে স্থাপিত এসব স্থাপনা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। তাদের ভাষায়, নগরীর বেশিরভাগ সড়কই সরু—এখানে ফুটওভার ব্রিজের প্রয়োজনই ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল অর্থ আত্মসাৎ।
সরজমিনে দেখা যায়, কোর্ট পয়েন্টের ফুট ওভারব্রিজটি পকেটমার, চোর আর ছিনতাইকারীর অভয়ারণ্য। নিচে হাসান মার্কেট, সিটি পয়েন্ট ও বন্দরবাজারের বিভিন্ন স্থানে চুরি ছিনতাই করে অপরাধীরা দ্রুত এই ব্রিজ ব্যবহার করে নিরাপদ স্থানে চলে যায়। অনেক সময় এই ব্রিজে মাদকের আসর বসে। এমনকি পতিতাবৃত্তির জন্যও ব্রিজটি ব্যবহার করা হয়।
টিলাগড়, আখালিয়ায় শাহজালাল বিশ্ববিদালয়, ও হুমায়ুন রশীদ চত্বর ওভার ব্রিজের অবস্থাও একই। নাগরিক প্রয়োজনের চেয়ে অকাজেই ব্যবহার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ব্রিজগুলো।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা বলেন, এই ব্রিজগুলো ব্যবহার করলে সময় ও কষ্ট দুটোই বেশি লাগে। আবার ব্রিজে উঠলেই দেখা যায় বখাটেদের ভিড়, কখনো মাদকসেবী বা ছিনতাইকারী। তাই বরং রাস্তা দিয়ে পার হওয়াটাই নিরাপদ।
বিশেষজ্ঞরাও একমত যে, এসব ব্রিজ নির্মাণে ছিলনা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। যাচাই করা হয়নি প্রাসঙ্গিকতা। স্থপতি রাজন দাশ বলেন, জনঘনত্ব, রাস্তার প্রস্থ, ট্রাফিক চাপ—এসব বিবেচনা না করেই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ফলে বাস্তবতা ও চাহিদার সঙ্গে মিল না থাকায় এসব ব্রিজ অব্যবহৃত থাকছে।
এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, সাধারণ মানুষকে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে একাধিকবার ব্যবহার না করা ব্রিজগুলো বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হলেও উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় বিক্রি সম্ভব হয়নি।
নগরবাসীর দাবি, ভবিষ্যতে এমন প্রকল্প গ্রহণের আগে প্রয়োজনীয়তা যাচাই, পরিকল্পনার স্বচ্ছতা এবং জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। নইলে জনস্বার্থে নেওয়া প্রকল্পই পরিণত হবে অর্থ অপচয়ের উদাহরণে।