
সিকারি ডেস্ক:: উজানের অতিভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হতে চলেছে সিলেটের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল এলাকা। সোমবার (১৯ মে) রাত থেকে মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত টানা অতি বর্ষণের ফলে সিলেট বিভাগের সকল নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে এখনো কোনো নদী বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।
পাউবো’র তথ্যমতে, সোমবার (১৯ মে) সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগের প্রত্যেকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার, ছাতক পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার, দিরাই পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। যাদুকাটা নদীর পানি শক্তিয়ারখোল পয়েন্টে ৯৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। কুশিয়ার নদীর পানি সিলেটের জকিগঞ্জের আমলশীদ পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার, বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার, শেরপুর পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। মনু নদীর পানি মৌলভীবাজার পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার, পিয়াইন নদীর পানি সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলং পয়েন্টে ১০২ সেন্টিমিটার, সারিগোয়াইন নদীর পানি জৈন্তাপুরের সারিঘাট পয়েন্টে ৮৯ সেন্টিমিটার, গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে মনু নদীর পানি মনুরেলব্রিজ পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার এবং ধলাই নদীর পানি কমলগঞ্জ পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার কমছে বলেও জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল ৯টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখালে ২১৬ মিলিমিটার, গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে ১৩৬ মিলিমিটার, সিলেট শহরে ৯২ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জ শহরে ১৬৫ এবং সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাউড়ের গড়ে ১৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে আগামী তিনদিন সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকার সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
জানা যায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জের বেশ কয়েকটি নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। অতিভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে এখনো কোনো নদী বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।
সিলেটের জাফলংয়ে হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢল নেমে পিয়াইন নদীতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঢলটি পিয়াইন নদী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টসহ আশপাশের এলাকা দ্রুত প্লাবিত হয়। নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ায় শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এতে আশপাশের বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের বরাতে জানা গেছে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
জাফলংয়ের অধিকাংশ পর্যটন এলাকা ইতোমধ্যেই পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের পর্যটন কার্যক্রম। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাফলং ছাড়াও গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ এবং কানাইঘাট উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতেও পানির প্রবল গতি ও ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় বহু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ার ফলে নদীর তীরবর্তী মানুষজনের মধ্যে ফের পার ভাঙনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এবং নদীর পূর্বের ভাঙা বাধগুলো আবার হুমকিতে পড়ছে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় প্রশাসনের বরাতে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। জাফলংয়ের অধিকাংশ পর্যটন এলাকা ইতোমধ্যেই পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের পর্যটন কার্যক্রম। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোও তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এসব এলাকায়ও প্রবল গতি ও ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। এলাকাগুলো কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, সিলেটের আকাশে এখনো প্রবল মেঘ জমে আছে এবং বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, সিলেটের যে সকল উপজেলা বন্যার আশঙ্কা রয়েছে সেই সকল উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশনা দেয়া আছে, বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোর জন্য নৌকা ও অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখেন। পাশাপাশি সিলেটের প্রসাশনের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া শুকনো খাবার, স্যালাইন রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।