
নিজস্ব প্রতিবেদক:: সিলেটের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ে ঈদের ছুটিতে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, মাদক ব্যবসায়ীদের সনাক্ত করে তথ্য দেওয়ার ‘অপরাধে’ একদল দুর্বৃত্ত প্রকাশ্যে পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পর্যটন নিরাপত্তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (৯ জুন) ঈদুল আজহার তৃতীয় দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে, জাফলং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন গাড়ি পার্কিং এলাকায়। এ সময় হামলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা মুহূর্তেই ক্ষোভ ছড়িয়ে দেয় নেটিজেনদের মাঝে।
ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবক অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন এবং হাতে লাঠি নিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে দুই-তিনজন পর্যটককে মারধর করছেন। আশেপাশে চিৎকার করছেন একজন নারীও। উপস্থিত অনেকেই ঘটনাটি দেখলেও কেউ বাধা দেননি।
‘তোমরা বিজিবিকে বলছো কেন?’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত হয় মাদকপাচারের একটি ঘটনায়। বিজিবি সদস্যরা সন্দেহভাজন কয়েকজন যুবককে ধাওয়া করলে, পার্শ্ববর্তী পর্যটকেরা তাদেরকে সহায়তা করে দিকনির্দেশনা দেন। কিন্তু বিজিবি কাউকে ধরতে না পারলেও, স্থানীয় মাদকচক্র সন্দেহ করে যে পর্যটকরাই তাদের তথ্য দিয়েছেন। এরপরেই ক্ষিপ্ত হয়ে তারা পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়।
তবে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল দ্রুত “সমঝোতা” করে ফেলে বলে জানা গেছে।
পুলিশ বলছে ‘স্থানীয়রা প্রতিহত করেছে’, কিন্তু ভিডিও বলছে ভিন্ন কথা
গোয়াইনঘাট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. কবির হোসেন বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। স্থানীয় কিছু বখাটে যুবক পর্যটকের ওপর হামলা করেছিল, তবে স্থানীয়রা সাথে সাথে প্রতিহত করেছেন। পরে সাংবাদিক ও ইউপি সদস্যদের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে।”
তবে এই বক্তব্যের সঙ্গে হামলার ভিডিওর মিল পাওয়া যায় না। বরং ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হামলাকারীরা বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পর্যটকদের মারধর করছেন এবং আশেপাশের কেউ প্রতিরোধ করছেন না।
প্রশাসন বলছে অভিযোগ আসেনি
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। স্থানীয় ও পর্যটকদের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়ে গেছে। তবে এখন পর্যন্ত আমার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।”
পর্যটন নিরাপত্তায় প্রশ্ন
এই ঘটনার পর স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অপরাধীরা যেন স্থানীয় পর্যটন এলাকায় ‘দুর্গ’ গড়ে তুলেছে। মাদকচক্রের তথ্য দিলে হামলা করা হচ্ছে এবং প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে দিচ্ছেন। এতে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও দেশের পর্যটন শিল্প মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।