• ৬ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করলেন ড. ইউনূস, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের ২৮ দফা ঘোষণা

sylhetcrimereport
প্রকাশিত আগস্ট ৫, ২০২৫
জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করলেন ড. ইউনূস, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের ২৮ দফা ঘোষণা

সিকারি ডেস্ক:: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ঢাকায় ঘোষণা করা হলো ঐতিহাসিক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ঘোষণাপত্রে দেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামের যৌক্তিকতা, অভ্যুত্থানের বৈধতা ও ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গঠনের রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়। নিচে ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত মূল ২৮টি দফা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো:

১–৫: ইতিহাস ও সংগ্রামের পটভূমি

১. পাকিস্তানি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং গণপ্রতিরোধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা।
২. স্বাধীনতার মূলনীতি—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার—বাস্তবায়নে জনগণের সর্বোচ্চ ত্যাগের স্মরণ।
৩. ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা তুলে ধরা।
৪. বাকশাল কায়েম করে একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে সিপাহি-জনতার বিপ্লবের পটভূমি।
৫. ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সামরিক স্বৈরতন্ত্রের পতন ও সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা।

৬–৭: ১/১১ এবং ফ্যাসিবাদের উত্থান

৬. ১/১১ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাকে বাধাগ্রস্ত করে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পথ উন্মোচন।
৭. ২০০৯–২০২৪ সময়কালে একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধান বিকৃতি ও গণতন্ত্রের দমন।

৮–১০: রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার ধ্বংস

৮. শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ ও সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ।
৯. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা।
১০. তথাকথিত উন্নয়নের নামে দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও পরিবেশবিনাশের চিত্র।

১১–১৩: জনগণের প্রতিরোধ ও ভোটাধিকার হরণ

১১. ছাত্র-জনতার ১৬ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং তার ওপর দমন-পীড়ন।
১২. বিদেশি খবরদারি এবং তার বিরুদ্ধে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে সরকারের দমননীতি।
১৩. ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪—তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার হরণের অভিযোগ।

১৪–১৭: ছাত্র আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থান

১৪. ভিন্নমতের দমন, দলীয় নিয়োগ এবং কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম।
১৫. বিরোধী দলের ওপর নিপীড়নে জনরোষ সঞ্চার এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিরোধ।
১৬. কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারি নিপীড়ন এবং তা থেকে গণআন্দোলনের বিস্তার।
১৭. ফ্যাসিস্ট বাহিনীর হাতে সহস্রাধিক মানুষ নিহত ও পঙ্গু হওয়ার বর্ণনা; সামরিক বাহিনীর জনগণের পক্ষে অবস্থান।

 

১৮–২০: শেখ হাসিনার পতন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন

১৮. ৫ আগস্ট গণভবনমুখী গণজোয়ারের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগ।
১৯. জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা ও অভ্যুত্থানের বৈধতা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
২০. ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন।

২১–২৪: ভবিষ্যতের রূপরেখা ও প্রতিশ্রুতি

২১. বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত।
২২. সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি।
২৩. গুম-খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার।
২৪. শহীদদের জাতীয় বীর ঘোষণা এবং আহতদের আইনি সুরক্ষা ও মর্যাদা প্রদানের ঘোষণা।

২৫–২৮: সংবিধান সংস্কার ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন

২৫. নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে সাংবিধানিক সংস্কারে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের কথা বলা হয়।
২৬. পরিবেশ-জলবায়ু-সহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের অভিপ্রায়।
২৭. ‘ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪’-কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও ভবিষ্যৎ সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা।
২৮. ৫ আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “এই ঘোষণাপত্র কেবল অতীতের অন্যায়ের প্রতিবাদ নয়, বরং একটি নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা। যেখানে শোষণহীন, বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।”