
তিনবার মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়েছে প্রায় অর্ধেক কাজ। শুধু তাই নয়, সড়ক নির্মানে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের উপকরণ। একপাশের আরসিসি ঢালাই সম্পন্ন হতে না হতেই ভাঙন ধরছে পূর্বের অংশে।
এমন সব অনিয়ম করা হয়েছে সিলেটের সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কে উন্নয়ন প্রকল্পে। অনুসন্ধানে নেমে এসব অনিয়মের প্রমানও পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আর ঠিকাদারের অযুহাত, বন্যার কারণেই এমন সমস্যার উদ্ভব। তবে, স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের করা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই সড়কটি সিলেটের পর্যটন নির্ভর জনপদ গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রধান সড়ক। বন্যা, ভারি বর্ষণ আর যানবাহনের চাপে বছরের পর বছর ধরে সড়কে ভাঙ্গন বাড়ছেই। এতে স্থানীয়দের পাশাপাশি সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় বিছনাকান্দি, পান্থুমাইয়ের মতো জনপ্রিয় স্পটে যাতায়তকারী পর্যটকদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়কের বেশিরভাগ অংশ ভাঙাচোরা ও অসংখ্য খানাখন্দে পরিপূর্ণ প্রতিদিনই হচ্ছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। শিক্ষার্থী, রোগী, পর্যটকসহ সকল শ্রেণির মানুষ এই সড়কে প্রতিদিন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। অল্প বৃষ্টিতেই যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
এমন অবস্থায়, ২০২৪ সালে দুটি প্যাকেজে ১০ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার ও নির্মান কাজ শুরু হয়। ঢালি কনস্ট্রাকশন ও দেলোয়ার হোসেন কনস্ট্রাকশন এসব প্রকল্পের কাজ পায়। ছয় মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। দেড় বছরেও শেষ হয়নি কাজ। এছাড়া কাজে ব্যবহার করা হয় নিম্নমানের সামগ্রী।
কাজের নির্ধারিত সময় শেষে তিনদফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এতদিনেও মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলীর। যদিও স্থানীয়রা বলছেন, ৩০ শতাংশও কাজ হয়নি। অনেক স্থানে ঢালাইকৃত অংশ ভেঙে গেছে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে এসব অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার সড়কটি সরেজমিনে পরিদর্শনে দুদক। অনুসন্ধানে এসব অভিযোগের সত্যতা পান দুদক কর্মকর্তারা।
দুদকের সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, সড়কের কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। আরসিসি ঢালাই শেষ হওয়ার আগেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা পরিদর্শনে গিয়ে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছি। অনিয়মের প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
তবে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বন্যার কারণে সড়কের কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজি্ইডি) সিলেট কার্যালয়ের প্রকৌশলী এ. কে শহীদুল ইসলাম বলেন, কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা তা আমলে নেয়নি। এখন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।