
সিকারি ডেস্ক:: সুনামগঞ্জের ছাতক ও সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী সোনাই নদীতে লিজ ছাড়াই অবাধে বালু উত্তোলন ও চাঁদাবাজি চলছে। অভিযোগ ওঠেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের কয়েকজন মিলে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছেন। আর এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা সুফি আলম সোহেল। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সরকারের ১০ কোটি টাকার রাবার ড্যাম। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে নদীর দুইপাড়ের ঘরবাড়িও।
স্থানীয়রা জানান, ছাতকের বৈশাকান্দি ও কোম্পানীগঞ্জের বাহাদুরপুরের কিছু নৌকা প্রতিদিন বালু উত্তোলন ও পাচার করে যাচ্ছে। প্রতিটি নৌকার ধারণক্ষমতা ৫০০ থেকে ৭০০ ফুট। বালুর এই রমরমা ব্যবসায় ৪৫ ফুট ধারণক্ষমতার বারকি নৌকাও ব্যবহার হয়। এই নৌকাগুলো ব্যবহার করে অবৈধ বালু বাণিজ্য পরিচালনা করছেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মখলিছুর রহমান, তার ভাই বিএনপি নেতা আব্দুল কদ্দুস, আওয়ামী লীগ নেতা রফিক আহমদ, মাহফুজ খান, এনামুল খান, বৈশাকান্দি করিমপুরের জামায়াত কর্মী চান মিয়া, রফিক মোল্লা, আওয়ামী লীগ কর্মী খুরশেদ আলম ও বিএনপি কর্মী রফিক মিয়াদের একটি সিন্ডিকেট। তাদের শেল্টার দিচ্ছেন ছাতকের ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা সুফি আলম সুহেল। বালু তুলতে ফুটপ্রতি ১০ টাকা করে নেন বালু সিন্ডিকেটের সদস্যরা। আর জায়গার মালিক দাবিদাররা নেন ফুটপ্রতি পাঁচ টাকা করে। এভাবে মিলেমিশে শেষ করা হচ্ছে সোনাই নদীর বালু।
সোনাই নদীর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল জব্বার খোকন জানান, রাবার ড্যামের ফলে সোনাই নদীর পানি দিয়ে বোরো মৌসুমে স্থানীয় কৃষকরা সাতশ একর অনাবাদি ও পতিত জমিতে বোরো ও রবিশস্য চাষ করেন। কিন্তু বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে রাবার ড্যাম। গত বছর বালু উত্তোলনের কারণে ড্যামে ছিদ্র হয়ে যায়। এবারও সেই ড্যাম হুমকির মুখে।
তিনি বলেন, সুফি আলম সোহেল চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি বালু সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিদিন রাবার ড্যাম এলাকায় শতাধিক নৌকায় বালু লুট হয়। বালু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার মিলে না। তাদের বিরুদ্ধে কৃষকরাও ভয়ে মুখ খোলেন না। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে জলপথে ছাতক যাওয়া মুশকিল হয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান সুফি আলম সুহেলের নেতৃত্বে রাত ২টা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলে বালু উত্তোলন। এলাকাবাসী নিষেধ দিলেও তারা মানে না। বর্তমানে নদীর দুইপাড়ের ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। সূত্রগুলো বলছে, বালু লুটের বিষয়ে পুলিশকে জানালে তারা আসব আসব করে, কিন্তু আসে না।
স্থানীয় এক ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রশাসনকে বহুবার মৌখিকভাবে জানিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন অভিযান করতে অনাগ্রহী। শুনেছি প্রশাসনকে মেইন্টেইন করা হয়। এজন্য হয়তো তারা বিষয়টি এড়িয়ে যায়।এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ছাতকের ১নং ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুফি আলম সোহেল দাবি করেন, বালু লুট বা চাঁদাবাজির সাথে তার কোনোদিনও সম্পর্ক ছিল না। তিনি বলেন, ‘বালু লুটের বিরুদ্ধে কথা বলায় কিছু দুষ্টু লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। অথচ যারা আমার বিরুদ্ধে সরকারি দপ্তরি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল, তাদের বাড়ির সামনেই বালু তোলার সরঞ্জামাদি পেয়েছে প্রশাসন।’
বালু লুটের অভিযোগ অস্বীকার করেন জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাতের আঁধারে কে বা কারা বালু নেয়, আমার জানা নেই।’
অভিযোগ অস্বীকার করেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মখলিছুর রহমানও। তিনি বলেন, ‘গত ছয় মাসের মধ্যে রাবার ড্যাম এলাকায় যাইনি।’ তাহলে কারা বালু তুলছে- এমন প্রশ্নের জবাবে মখলিছ কারও নাম বলতে রাজি হননি।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বিএনপি নেতা আব্দুল কুদ্দুসের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কল রিসিভ করেননি।
আর অভিযুক্ত মাহফুজ খান বলেন, ‘পুলিশ ও প্রশাসনকে মেইন্টেইন করে আগে একজন চালাতেন (বালু উত্তোলন)। এখন আরেকজন চালাচ্ছেন। এখানে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই।’
ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, বালু লুটের সাথে জড়িতদের আমরা কোনোভাবেই প্রশ্রয় দিচ্ছি না। নিয়মিত সেখানে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার দুইজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জের নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিন মিয়া বলেন, খোঁজ নিয়ে অবৈধ বালুখেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।