
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের বই সংগ্রহে শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং প্রায় ৩০টি কিন্ডার গার্টেন স্কুল থেকে এই চাঁদার টাকা নেওয়া হয়।
প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নির্ধারিত একজন শিক্ষকের মাধ্যমে ১০০ টাকা হারে চাঁদা তোলা হয়েছে। অন্যদিকে কিন্ডার গার্টেন স্কুলের সমিতির মাধ্যমে নেওয়া হয় এই চাঁদার টাকা।
সরকারি বিধিতে বিনা মূল্যের বই সংগ্রহে জন্য টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম না থাকলেও অনৈতিক উপায়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এই টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষকরা।
বই সংগ্রহের জন্য পরিবহন খরচ সরকারিভাবে বরাদ্দ থাকলেও উপজেলা অফিস থেকে বই সংগ্রহের জন্য বিনা রসিদে চাঁদা দেওয়ার কোনো বিধান নেই।
গত ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর উপজেলার আবাসিক এলাকার ডরমিটরি থেকে প্রথম শ্রেণির বাংলা, গণিত, ইংরেজি বই, দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা, গণিত, ইংরেজি বই, তৃতীয় শ্রেণির ছয়টি বিষয়ের তথা সব বই, চতুর্থ শ্রেণির বাংলা, গণিত, ইংরেজি, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বই, পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত, ইংরেজি বই প্রদান করা হয়। কিন্তু উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ শ্রেণির প্রাথমিক বিজ্ঞান, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, প্রাথমিক বিজ্ঞান, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের বই প্রদান করা হয়নি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো তাদের চাহিদা অনুযায়ী বই পেলেও কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো চাহিদার ৭০ শতাংশ বই পেয়েছে বলে জানা যায়।
সরেজমিনে উপজেলার ডরমিটরি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বড় শিমলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম কাগজে কলমে স্কুলের নাম লিখে টাকা নিয়ে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিকট বই বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি ক্লাস্টারের ন্যায় আড়পাড়া শিবনগর ক্লাস্টারের ২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিনামূল্যের বই প্রদানের জন্য টাকা তুলেছেন উপজেলার ভাতঘরা জটারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান।
নিয়মবহির্ভূতভাবে বিনামূল্যের বই প্রদানে প্রতি স্কুল থেকে চাঁদা তোলার ব্যাপারে কথা হলে মিজানুর রহমান জানান, স্কুল প্রতি ১০০ করে টাকা তুলে আমার অফিসে দিয়েছিল।
ওই টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা অফিসারের নিকট জমা দিয়ে দিয়েছি। বই নেওয়ার জন্য টাকা দেওয়ার কোনো নিয়ম আছে কিনা আমি জানি না। তবে এবার বই বিতরণের কাজ শিক্ষকরাই করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, এবার অফিস থেকে নিয়ম করেছে স্কুল প্রতি ১০০ করে টাকা দিতে হবে বই নেওয়ার জন্য। পূর্বে আমরা বই নেওয়ার কাজে সহযোগিতাকারীদের ২০-৩০ টাকা বা যে যার ইচ্ছা মত টাকা দিতেন।
কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। স্যার রাই বই দিচ্ছেন, তারাই টাকা তুলেছেন।
তারা আরো বলেন, কিন্ডারগার্টেনের প্রায় ৩০টি স্কুলকেও একই হারে নগদ টাকা দিয়ে বই নিতে হয়েছে। এ বছর সব শ্রেণির বই একসঙ্গে পেলাম না। উপজেলায় বাকি বইগুলো আনতে গেলেও আবার টাকা দেওয়া লাগবে কিনা আল্লাহই ভালো জানে। তবে এভাবে বাধ্যতামূলক টাকা নেওয়ার ফলে অনেকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি দেখার কথা বলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিইও) শারমিন নাসিমা বানু বলেন, টাকা তোলার ব্যাপারে আমি জানি না। বই বিতরণ কার্যক্রমের সঙ্গে যারা জড়িত থাকে তাদের আপ্যায়নের জন্য কিছু টাকা হয়ত তারা দিতে পারেন। এটা সব জায়গাতেই হয়। অবশ্য এটা কালচারে পরিণত হয়েছে। তা ছাড়া শিক্ষক সমিতির নেতারা এটা দেখভাল করছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেদারুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাপারটা আপনার থেকে প্রথম শুনলাম। আমি দেখব।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর সাহা বলেন, ‘বই নেওয়ার জন্য কোনো টাকা নেওয়ার বিধান নেই। টাকা নিতে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করা হয়েছে। তার পরও কোনো টাকা নেওয়ার হলো সেটা খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।’
এস.এ…