• ২৫শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গোয়াইনঘাটে বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যাচ্ছে ‘ডেভিল’ মিসবাহ ও তার ভাই

sylhetcrimereport
প্রকাশিত জুন ২৪, ২০২৫
গোয়াইনঘাটে বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যাচ্ছে ‘ডেভিল’ মিসবাহ ও তার ভাই

নিজস্ব প্রতিবেদক:: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তোয়াকুল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠছে। স্থানীয়দের দাবি—এই নেতার রোষানলে পড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকার শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ।

তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্র ও জনতার ওপর হামলা চালানোর একাধিক মামলা থাকলেও রহস্যজনক কারণে এখনও পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেনি। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কিছু সুবিধাভোগী বিএনপি নেতা তাঁকে ইন্ধন ও শেল্টার দিয়ে চলেছেন।

মিসবাহ উদ্দিনের বড় ভাই আলাউদ্দিন তোয়াকুল ইউপির নির্বাচিত সদস্য। তাঁর প্রভাবেই সরকার থেকে এলাকায় যে উন্নয়ন বরাদ্দ আসে, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সম্প্রতি তোয়াকুল ইউনিয়নের লাকী গ্রামের যুবক রুবেল সরকারিভাবে প্রাপ্ত বরাদ্দের কাজে অনিয়মের প্রতিবাদ করলে, মিসবাহ ও তার ভাই আলাউদ্দিন দলবল নিয়ে তোয়াকুল বাজারে তার ওপর হামলা চালায়। হামলার একটি ভিডিও ক্লিপ সাংবাদিকদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

ওই ঘটনায় রুবেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনও পর্যন্ত মিসবাহ ও আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি-সম্পৃক্ত কয়েকজন পদধারী নেতার ছত্রছায়ায় এরা এলাকায় ভয়ভীতি ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।

এছাড়াও স্থানীয় কয়েকজন যুবক ও তাঁদের পরিবার জানান, গত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে মিসবাহর নির্দেশে যারা ছাত্রলীগে যুক্ত হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। অনেকে গবাদিপশু বিক্রি করে মামলা চালাচ্ছেন। দেশজুড়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও মিসবাহ ও তার ভাই এখনও দাপট দেখিয়ে সমাজে নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

এ সংক্রান্ত একাধিক যুবকের ভিডিও সাক্ষ্যও রয়েছে সিলেট ক্রাইম রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, ২০২৪ সালে সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদের প্রভাব খাটিয়ে মিসবাহ উদ্দিন তোয়াকুল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে চাকরি পান। এতে একই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনেক প্রার্থী বঞ্চিত হন। অভিযোগকারীদের দাবি, মেধার চেয়ে রাজনৈতিক আনুগত্য মূল্যায়িত হয়েছে।

চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরেও তিনি নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে সেবাপ্রার্থীরা নিয়মিত হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মিসবাহ উদ্দিন বলেন, “আমার ভাই তিনবারের মেম্বার। এই ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। পূর্ব শত্রুতার জেরে আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। চাকরির ব্যাপারেও মন্ত্রী ইমরানের কোনো সুপারিশ নেইনি, আমি মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই চাকরি পেয়েছি।”

তোয়াকুল ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন বলেন, “একটি পূর্বের মারামারির ঘটনায় ষড়যন্ত্র করে আমাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার পরে পিআইও কাজ পরিদর্শন করে বিল দিয়েছেন। এখানে অনিয়মের সুযোগ নেই।”

কাজের বিষয়টি জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বাঁধন কান্তি সরকার বলেন, “এই প্রকল্পের কাজে কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি। মেম্বার সাহেব কাজ যথাযথভাবেই সম্পন্ন করেছেন।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দিদারুল আলম জানান, “মামলার ৭ আসামির মধ্যে ৫ জন জামিনে রয়েছেন। মিসবাহ ও তার ভাই আলাউদ্দিন পলাতক। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অচিরেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।”