ছবিতে উপরে-দেলোয়ার, সাইফুল, অরবিন্দু। নিচে- রুবেল আহমদ, আব্দুল খালিক লাভলু ও সামছু জামান। (ফাইল ছবি।)

নিজস্ব প্রতিবেদক:: সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টেন্ডার বাগিয়ে নেয় অখ্যাত প্রতিষ্ঠান “সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস”। মাত্র ছয় মাসের জন্য নিয়োগ পাওয়া প্রতিষ্ঠানটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী জুন মাসে। তবে আগেভাগেই মেয়াদ বাড়াতে জোর তদবিরে নেমেছেন হাসপাতালের তিন কর্মকর্তা।
জানা গেছে, সাউদিয়া সিকিউরিটির পক্ষে সক্রিয় রয়েছেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার দেলোয়ার হোসেন, তার সহযোগী ওয়ার্ড মাস্টার সাইফুল মালেক খান এবং সিনিয়র স্টাফ নার্স অরবিন্দু চন্দ্র দাস। এই তিনজন মিলে সংশ্লিষ্ট মহলে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়াদ বাড়ানোর জন্য।
সূত্র বলছে, বিগত সরকারের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রশ্রয়ে সাউদিয়া সিকিউরিটি হাসপাতালের আউটসোর্সিং নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পায়। এরপরই শুরু হয় নিয়োগ বাণিজ্য। তা এখনো রয়েছে আগের মতো। নিয়োগপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে ২৬২ জনের স্থলে ৩২৫ জনকে নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে অতিরিক্ত নিয়োগপ্রাপ্ত বেশির ভাগই বেতন ছাড়াই কাজ করছেন। তারা রোগী-রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে অর্থ আদায় এবং ওষুধ চুরির মতো কার্যকলাপে যুক্ত আছেন, যা সংঘটিত হচ্ছে দুই ওয়ার্ড মাস্টারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন হাসপাতাল পরিচালক হরিজন সম্প্রদায়ের ৫০ জনকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে নিয়োগ দিলেও সাউদিয়া সিকিউরিটি তাদের চাকরি থেকে বহিষ্কার করে। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়, যা দিতে না পারায় তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। হরিজন সম্প্রদায়ের সিলেট জেলা সহ-সভাপতি পান্নু লাল বিষয়টি নিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি একাধিক দপ্তরে অভিযোগও করেন। তিনি জানান, কোনো সুরাহা না হওয়ায় আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া একটি সুসংগঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রকিব বাবলুর ছোট ভাই যুবলীগ নেতা আব্দুল খালিক লাবলু। তিনি পর্দার আড়ালে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাবেক আওয়ামিলীগ কর্মী থেকে পরিবর্তন হয়ে উঠে আসা গোয়াইনঘাট উপজেলা শ্রমিক দলের রুবেল আহমদ রানা এবং সামছু মিয়া।
হাসপাতালের একাধিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারীরা জানান, নতুন নিয়োগ প্রাপ্তদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মচারী বর্তমান কর্তা রুবেল ও সামছু ১.৫ লাখ টাকা এবং পুরনোদের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা করে নিয়েছেন। এসব সিভি জমা পড়েছে ওয়ার্ড মাস্টার দেলোয়ারের কাছে। আর তিনি ও সাইফুল মালেক বিনা বেতনে চাকরির সুযোগ করে দিচ্ছেন, যা স্পষ্টভাবে অনৈতিক।
অভিযোগ গুলো নিয়ে রুবেল আহমদ রানার সাথে আলাপকালে নিয়োগের সময় পোশাকসহ আনুষাঙ্গিক একটা খরচ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। যা অনৈতিকতার একটা প্রমান। তবে দেড় দুই লাখের বিষয় অস্বীকার করে দায় এড়ানো পায়তারা করেন। এতোকিছুর পরেও তিনি দৃঢ় বিশ্বাসে বলেন, ওসমানী মেডিক্যাল এর আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগ তাদের কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে-ই বহাল থাকবে।
এই সব অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক আহমদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।