
নিজের সন্তানকে অপহরণ ও পরিবারিক নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন নগরীর খাসদবীর বন্ধন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা শাহানা জাহান পলি বকস। নেপথ্যে রয়েছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামীলীগের সাবেক প্রভাবশালী দুই নেতা।
শনিবার সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের ড. রাগীব আলী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন ভিক্টিম পলি বকস।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ৫ অক্টোবর পরিবারের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে আমার স্বামী দেলওয়ার মাহমুদ জুয়েল বকস এর সাথে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে আমাদের দাম্পত্য জীবন সংসার সুখে-শান্তিতে চলছিল। মহান আল্লাহ্ তায়ালার অশেষ রহমতে আমাদের সুখী সংসারে তিনটি সন্তান জন্ম নেয়—দেওয়ান ফাহমিদ বকস (১৭), সৈয়দ তাহসিন বকস (১৩) এবং সুরাইয়া ফাইরোজ বকস (৭) ।
তিনি আরো বলেন, বড় দুঃখের বিষয় আমার সুখের সংসার ভেঙ্গে ছিন্নভিন্ন করার জন্য বারবার অপচেষ্টা করেছেন আমারই পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন। বিশেষ করে ছাতক থানার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের লক্ষনসোম গ্রামের আমার বাবার চাচাতো ভাই নুরুল ইসলাম (৫৫) ও সৈয়দুল ইসলাম (৫০) একই উপজেলার আমার পিত্রালয়ের ঠিকানা নোয়ারাই ইসলামপুরের আমার আপন বড় ভাই লন্ডন প্রবাসী শাহনেওয়াজ কল্লোল (৪০), এবং আমার ভাইয়ের বন্ধু নুর আলম (৩৯) ও আমার আপন বড় বোন লন্ডন প্রবাসী সুহেনা জাহান পপি (৩৮), নতুন পেশী মাস্তান আমার পিত্রালয়ের কেয়ারটেকার মাদক ব্যবসায়ী আরিফ আলী (২৪) ।
বিবাহের পর থেকেই আমার সুখের সংসার ভেঙে দেওয়ার জন্য নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আমার চাচা সৈয়দুল ইসলাম ও জাউয়াবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম চাচা আমার সংসার ভাঙ্গার জন্য বিয়ের পর থেকেই নানান ষড়যন্ত্র করে আসছেন।
কিছুদিন পূর্বে নুরুল ইসলাম ও সৈয়দুল ইসলাম আমাকে পূর্বের আক্রোশ ও বিদ্বেষ অন্তরে রেখে মিষ্টি ব্যবহার দেখিয়ে আমার অসুস্থ পাগল গর্ভধারিণী মাকে দেখার পরামর্শ দিয়ে পূর্বের বিরোধ নিষ্পত্তির প্রলোভন দেখিয়ে কৌশল করে আমার ভাই-বোনের সহযোগিতায় লক্ষনসোম গ্রামে তাদের বসতবাড়িতে নিয়ে গিয়ে বলেন, তোমার স্বামী জুয়েল বকসকে ডিভোর্স দিয়ে দেও, “বাংলাদেশে তোমার সংসার করার দরকার নেই, তোমাকে লন্ডনী জামাই দেখে বিয়ে দেবো।” আমি তাদেরকে উত্তরে বলি, “আমার তিনটি সন্তান রয়েছে, আমি এদের ছেড়ে থাকতে পারবো না।” তখন তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আমার দ্বিতীয় ছেলে সৈয়দ তাহসিন বকস ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ইং স্কুল থেকে অপহরণ হয়ে যায়। ছেলের খোঁজ না পেয়ে আমার স্বামী এয়ারপোর্ট থানায় জিডি করেন (জিডি নং ১২০৭, তারিখ: ২৭/০১/২০২৫) ।
সন্তান হারানোর শোকে আমরা প্রহরের পর প্রহর গণনার ভয়াবহ অপেক্ষায় দিন-রাত পার করছি— চার মাস ধরে আমরা সন্তানকে বিভিন্ন স্থানে খুঁজেতে খুজতে পাগলের মতো ছুটাছুটি করছি । স্কুলের শিক্ষার্থীরা তার সন্ধান পেতে সিলেট শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে । এবং আমাদের নিয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে, এবং আপনারা অনলাইন মিডিয়া সাংবাদিক ও প্রিন্ট মিডিয়া সাংবাদিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমার ছেলের নিখোঁজ সংবাদ প্রকাশ করেছেন। আমরা দীর্ঘদিন ছেলে হারা হয়ে পাগলের মতো ছিলাম।
এমতবস্থায় নুরুল ইসলাম চেয়ারম্যান ও সৈয়দুল ইসলাম এবং আমার আপন ভাই-বোন সহ কয়েকজন অর্থ লোভী মফস্বল সাংবাদিক আমাকে ভূল বুঝিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ডিপ্রেশনে ফেলে আমার সন্তানকে বের করে দিবে বলে, আমি একটি কাগজ পড়লে আমার সন্তানকে পেয়ে যাবো। এই কুপরামর্শ দিয়ে আমাকে একটি কাগজ পড়ানোর নামে সাংবাদিক সম্মেলন করিয়ে আমার স্বামীর বিরুদ্ধাচরন করায়!!! যারা ভালো সাংবাদিক ছিলেন তাঁরা আমার সরলতায় ধোঁকা খেয়েছি চিন্তা করে পোষ্টগুলো কেটে ফেলেন। এবং আমার স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা সম্মানের যোগান দেন। আমার বাবার সমতুল্য চাচাদের ও আপন ভাই-বোনকে পারিবারিক সৌন্দর্যের আশায় বিশ্বাস করে আমি অসংখ্যবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি ।
তিনি বলেন, গত- ২০ মে ২০২৫ তারিখে আমার ছেলের সহপাঠী শাকিলের বাবা আমার স্বামীর মোবাইলে ফোন করে জানান যে, আমার নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের ধনপুর বাজারে। স্থানীয়রা অসুস্থ অবস্থায় তাহসিনকে পেয়ে ডাঃ রফিকুল ইসলামের ফার্মেসিতে নিয়ে যান। এই সংবাদ শোনার সাথে সাথে আমার স্বামী জাতীয় নিরাপত্তা সেবা ৯৯৯ ফোন করলে, ৯৯৯ কর্তৃপক্ষ স্থানীয় এয়ারপোর্ট থানায় যোগাযোগ করার কথা বললে আমার স্বামী এয়ারপোর্ট থানার ওসি আনিসুর রহমান ও এস.আই আব্দুল আজিজ সাহেবকে অবগত করেন এবং এস.আই আব্দুল আজিজ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ধরপুর বাজারে গিয়ে ডাঃ রফিকুল ইসলাম সহ গং লোকজনের সহিত যোগাযোগ করে স্থানীয় বাজারের মসজিদ চত্বরে গিয়ে আমার ছেলেকে অত্যন্ত দুর্বল ও রুগ্ন শুয়া অবস্থায় দেখতে পান। পরবর্তীতে স্থানীয় বিশ্বম্ভরপুর থানার সহযোগীতায় আমার সন্তানকে উদ্ধার করে এয়ারপোর্ট থানায় নিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, আমার ছেলে সৈয়দ তাহসিন বকস উদ্ধার হওয়ার পরে আমি তাৎক্ষণিক এয়ারপোর্ট থানায় মামলা করতে চাই। কিন্তু এয়ারপোর্ট থানা মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা বলেন, “ছেলেকে নিয়ে বাসায় চলে যান।” একজন মা হিসেবে আমার কষ্ট, অসহায়ত্ব ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। আমার ছেলেকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি তাঁর কাছ থেকে জানতে পারি আমার নিজের ভাই-বোন, চাচাসহ আত্মীয় স্বজনরা, আমার ছেলেকে অপহরণ করে অমানবিক নির্যাতন করেছে। বিগত ২৭/০১/২০২৫ ইং তারিখ অনুমান বেলা ২ ঘটিকায় আমার দ্বিতীয় সন্তান সৈয়দ তাহসিন বক্সকে স্কুল ছুটি হওয়ার পর স্কুলের গেইট থেকে আমার বড় ভাই শাহনেওয়াজ কল্লোল (৪০) ও তার বন্ধু নুর আলম (৩৯) আমার পিত্রালয়ের কেয়ারটেকার আরিফ আলী (২৪) নূরুল ইসলাম চেয়ারম্যান এর ছেলে ইকবাল হোসেন (৩০) আমার সন্তানকে বাসায় পৌছে দিবে বলে তাদের সাথে সিএনজিতে তুলে নিয়ে চৌকিদিকি আমানা শপের পাশে মেইন রোডে দাঁড়ানো একটি কালো রঙের নোহা গাড়ির সামনে সি.এন.জি দাড় করায়। তখন আমার ছেলে দেখতে পায় ঐ নোহা গাড়ীতে তার কল্লোল মামা (৪০) সৈয়দুল নানা (৫০) ও খালা সুহেনা জাহান পপি (৩৮) গাড়ীর ভিতরে বসে আছে। তখন আমার ছেলেকে শাহনেওয়াজ কল্লোল বলে আয় আমরা এদিকে যাবো তোমাকে তোমাদের বাসায় নামিয়ে দেব বলে নোহা গাড়ীতে তুলে, আরিফ আলী তাহসিন এর মুখে একটি রুমাল ধরলে আমার ছেলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এয়ারপোর্ট থানা মামলা না নেওয়ায় গত বৃহস্পতিবার মাননীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের ২য় আদালত সিলেটে মামলা দায়ের করি।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি বলেন, আমার চাচারা নুরুল ইসলাম চেয়ারম্যান ও সৈয়দুল ইসলাম আমাকে বাণিজ্যিক পন্য বানিয়ে টাকার বিনিময়ে লন্ডনী পাত্রের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার বাবা রাজি হননি। কারণ সৈয়দুল ইসলামের চরিত্র খারাপ তাদের পরিবারের নোংরামি ও অশ্লীলতা আমার বাবা পছন্দ করতেন না। আমার বিয়ের পরে আমার চাচারা আমার পরিবারকে হাতে নিয়ে আমার সাজানো সংসার ভাঙার জন্য আমার স্বামীর উপর মিথ্যা মামলা দায়ের করান। এবং আমি তাদের কুচক্রী আচরণ বুঝতে পেরে আমার স্বামীর পক্ষ নিয়ে স্বামীকে সহযোগীতা করি আমার স্বামী মামলায় বিজয় লাভ করেন। এবং ২০০৭ সালে আমার মাকে তাদের দখলে থাকা আমাদের সম্পত্তি ফেরত দিবেন প্রলোভন দিয়ে, কুপরামর্শ দিয়ে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করায়। এবং আমি মামলার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করি।
আমার পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজন আমার সুন্দর সাজানো সংসার ভেঙ্গে ফেলার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকায়, তাদের ঘৃণিত অসৎ আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে আমি তাদের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি- (ছাতক থানা জিডি নং ৩৩১, তারিখঃ ০৮/০৭/২০০৭ ইং)
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি বলেন, আমার স্বামী একজন সৎ, আদর্শবান, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও ব্যবসায়ী । আমার স্বামী সন্তান নিয়ে আমি সুখে শান্তিতে সম্মানে বাঁচতে চাই। আমার স্বামী আমার প্রতি ভালোবাসা সম্মান ও দায়িত্ব পালনের কোন ত্রুটি করেন না। আমার সন্তানরা তাদের বাবা-মাকে ভালোবাসে, তারা পিতা-মাতার সান্নিধ্যে থাকতে চায়। অথচ প্রতিহিংসা পরায়ণ আত্মীয়স্বজন আমার স্বামীর চরিত্র হনন করে, আমাদের সংসার ধ্বংস করে এবং সন্তানদের থেকে পিতা-মাতাকে বিচ্ছিন্ন করতে মড়িয়া হয়ে চেষ্টা করছে। আমি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রশাসনের মাননীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ এবং সংবাদমাধ্যমের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি— এই ষড়যন্ত্রকারী চক্র আমার সন্তান অপহরণকারী আমার আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিনীতভাবে অনুরুধ করছি। না হয় এই আত্মীয়স্বজন রুপি সন্ত্রাসীরা আমি ও আমার স্বামী সন্তানদের যেকোন সময় বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করতে পারে। আমি এই রাষ্ট্রের একজন নারী, একজন মা, একজন নাগরিক হিসেবে আমি ন্যায়বিচার চাই। আমার শিশু সন্তান এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছে, তার উপর সন্ত্রাস, পরধনলোভী, লম্পট, নির্যাতনকারী চাচারা ও হিংস্র জানোয়ার ভাই-বোনরা চরম নির্যাতন চালিয়েছে। তাদেরকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি । ভবিষ্যতে আমি ও আমার স্বামী সন্তান সহ স্বামীর পরিবার কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাইনা ও নতুন কোন বৈষম্যের শিকার হতে চাইনা । আমি মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে-শান্তিতে, জীবন সংসার করতে চাই, ভালোভাবে বাঁচতে চাই। আপনাদের সর্বাত্বক সহযোগী আমি কামনা করছি। বিজ্ঞপ্তি;