• ১০ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

উৎমাছড়া থেকে পর্যটকদের তাড়িয়ে দিলেন স্থানীয়রা, প্রশ্ন উঠেছে পর্যটন নিরাপত্তা নিয়ে

sylhetcrimereport
প্রকাশিত জুন ৯, ২০২৫
উৎমাছড়া থেকে পর্যটকদের তাড়িয়ে দিলেন স্থানীয়রা, প্রশ্ন উঠেছে পর্যটন নিরাপত্তা নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক:: সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উৎমাছড়া এখন পর্যটকদের জন্য ‘নিষিদ্ধ এলাকা’। ঈদের দ্বিতীয় দিনে পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এই স্পট থেকে পর্যটকদের সরিয়ে দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
রবিবার (৮ জুন) বিকেলে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের চরারবাজার এলাকায় অবস্থিত উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে। ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় কওমি মাদরাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কিছু যুবক পর্যটকদের বাধা দিয়ে এলাকা ত্যাগ করতে বলেন। তাদের দাবি—পর্যটকদের কারণে এলাকাটির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, “এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয় জনগণ মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, উৎমাছড়াকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আর ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। অনেকে এখানে এসে মদ্যপান ও অশ্লীল কার্যকলাপ করে, যা সমাজ ও যুব সমাজকে নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।” ভিডিওতে আরও বলা হয়, ঈদের আগের দিন স্থানীয় উলামায়ে কেরাম, মুরব্বি ও যুব সমাজ মিলে এই বিষয়ে মিটিং করেন এবং একমত হন যে, এই এলাকা আর পর্যটনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে না।
ঘটনার বিষয়ে যুব জমিয়ত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি মুফতি রুহুল আমিন সিরাজী বলেন, “পর্যটকদের কিছু অংশ উৎমাছড়ায় এসে অশ্লীলতা ও মাদক সেবনের মতো কাজ করছে। এই ধরনের কার্যক্রম স্থানীয় পরিবেশ ও যুব সমাজকে নষ্ট করছে। এজন্য আমরা এলাকাবাসী মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই স্পট পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, এলাকায় মাদকের অবাধ ছড়াছড়ি বিক্রেতারদের রয়েছে বিরাট এক সিন্ডিকেট অথচ সেদিকে নজর না দিয়ে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করার পিছনে পাথর লুটপাটের এক পরিকল্পিত চক হতে পারে।
এদিকে উত্তর রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, “আমি ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। আমার ইউনিয়নের কিছু যুবক ও যুব জমিয়তের নেতৃবৃন্দ পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে পর্যটকদের সেখানে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।”
স্থানীয়দের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে পর্যটন নিরাপত্তা ও ব্যক্তিস্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো ধরনের অনিয়ম বা পরিবেশ দূষণ রোধ করা প্রশাসনের দায়িত্ব। নিজ উদ্যোগে জনসাধারণকে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
উল্লেখ্য, সাদা পাথর, জাফলং, বিছানা কান্দি ও উৎমাছড়া একসময় পাথর-বেষ্টিত স্বচ্ছ পানির জন্য জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসের লাগামহীন পাথর উত্তোলনে এই সৌন্দর্য ধ্বংস হয়ে গেছে। তার ওপর নিরাপত্তা ও স্থানীয় বিরূপ মনোভাব পর্যটকদের আগ্রহ আরও কমিয়ে দিচ্ছে। এবারের ঈদের ছুটিতে সিলেটে পর্যটকের উপস্থিতি ছিলো চাহিদার চেয়ে অর্ধেক।