• ১৬ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মাধবপুরে ৫ বছরেও শেষ হয়নি ৯ বিদ্যালয়ের কাজ

sylhetcrimereport
প্রকাশিত আগস্ট ১৫, ২০২৫
মাধবপুরে ৫ বছরেও শেষ হয়নি ৯ বিদ্যালয়ের কাজ

সংগৃহিত

সিকারি  ডেস্ক::  হবিগঞ্জের মাধবপুরে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের(পিইডিপি ৪)  আওতায় নির্মাণাধীন নয়টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজের অগ্রগতি বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও স্থাণীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। তবে প্রকল্পের আওতায় নির্মানাধীন ৯ টি বিদ্যালয়ের কাজ শেষ হওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ২০২১ সালে ৮ টি ও ২০২২ সালে ১ টি বিদ্যালয়ের কাজ শুরু হলেও ঠিকাদারের স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের যথাযথ মনিটরিং না থাকায় এসব বিদ্যালয়ের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

ইতোমধ্যে ঠিকাদারেরা বরাদ্ধের প্রায়  সাড়ে ৬ কোটি টাকার মধ্যে সাড়ে ৫ কোটি টাকা তুলে নিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। কাজের অগ্রগতি বিষয়ে শিক্ষা অফিস এবং এলজিইডি দুইরকম  কথা বলায় প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের (পিইডিপি-৪) আওতায় ৯ টি বিদ্যালয়ের কাজের চুক্তিমূল্য  ৬ কোটি ৫২ লাখ টাকার মধ্যে কাজ শেষ না করেই এলজিইডির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে ঠিকাদারেরা   অন্ততঃ সাড়ে ৫ কোটি টাকার বিল তুলে নিয়ে গেছে।

শিমুলঘর,উত্তর খড়কি,আউলিয়াবাদ,রসুলপুর, খাটুরা,পুরাইখোলা,উত্তর বেজুড়া, সুরমা ও চৌমুহনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উর্ধ্বমুখি সম্প্রসারণ ও নতুন ভবন নির্মানের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের( পিইডিপি-৪) কাজের মধ্যে চৌমুহনী সরকারী বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মানের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে।বাকি ৮ টির কাজ আরো আগে ২০২১ সালে শুরু হয়। গত ১২ মার্চ উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দপ্তর থেকে এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা তুলে ধরে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে একটি রিপোর্ট প্রেরণ করা হয় যাতে সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।

ওই রিপোর্টে শিমুলঘর ও উত্তর খড়কি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজ ৬০ থেকে ৭০  শতাংশ শেষ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। বরাদ্ধের ১ কোটি ২১ লাখ টাকার মধ্যে ঠিকাদার ৯০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।আর এলজিইডির দাবি এখানে ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আউলিয়াবাদ ও রসুলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪০ থেকে) ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে শিক্ষা অফিস বললেও এলজিইডির দা৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।এই প্যাকেজে বরাদ্ধের ১ কোটি ২১ লাখের মধ্যে ৯০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। খাটুরা ও পুরাইখোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজ শেষ হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ।তবে এলজিইডির দাবি ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ঠিকাদার বরাদ্দের ১ কোটি ২৫ লাখের মধ্যে ৯৪ লাখ টাকাই তুলে নিয়েছেন।  শিক্ষা অফিসের মতে উত্তর বেজুড়া ও সুরমা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে  কাজ হয়েছে ৯০ শতাংশ যদিও এলজিইডির দাবি এ প্যাকেজে শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এই প্যাকেজে বরাদ্দের ১ কোটি ৩৬ লাখের মধ্যে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। চৌমুহনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মানের জন্য বরাদ্দের ১ কোটি ১৪ লাখ টাকার মধ্যে ৯২ লাখ টাকা তুলে নিয়ে গেলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৬৫ শতাংশ।এলজিইডির দাবি ৮২ শতাংশ কাজ করেছে ঠিকাদার। শুধু বরাদ্ধের সিংহভাগ টাকা উত্তোলণ করেই ক্ষান্ত হয়নি ঠিকাদাররা।পারফরমেন্স গ্যারান্টি বাবদ মোট বরাদ্ধের ৫ শতাংশ  জামানতও তুলে নিয়েছেন।

তবে একাধিক সূত্রে এবং সরেজমিনে কয়েকটি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে শিক্ষা অফিস এবং এলজিইডির দাবির চেয়েও অনেক কম কাজ হয়েছে । কাজ শেষ হওয়ার আগেই এভাবে বিলের টাকা উত্তোলণের সাথে এলজিইডির একটি চক্র জড়িত বলে সূত্র জানিয়েছে। এলজিইডির যোগসাজশ ছাড়া এভাবে কাজ না করে বিল উত্তোলন সম্ভব নয় বলে সূত্রটি জানায়। মাস তিনেক আগে যোগদানের পর হঠাৎ করেই ঢাকায়  বদলি হওয়া মাধবপুরের সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী রেজা উন নবীও  এমন মন্তব্য করেছিলেন এ প্রতিনিধির কাছে।

বর্তমানে নির্মানকাজ একেবারেই বন্ধ থাকায় কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। কবে শেষ হবে কাজ কেউ বলতে পারছেন না।শিক্ষা অফিসের রিপোর্টেও দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকার পরেও ঠিকাদারদের অধিক পরিমানে বিল প্রদান করায় পরোক্ষভাবে এলজিইডিকে দায়ী করা হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ট্রেডার্স ও মেসার্স গোলাম ফারুকের মালিক ঠিকাদার আবুল কালাম জানান,, ‘কাজ তো শেষ করবই।’ এরপর ফোন তিনি কেটে দেন।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার এস এম জাকিরুল হাসান জানান,’আমি আমার জায়গা থেকে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।এখন কিভাবে কি হবে না হবে কিছু বলতে পারছি না আর।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহিদ বিন কাশেম জানান, ‘এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’