
সিকারি ডেস্ক:: সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার একই গ্রামের ছয়জন রাজমিস্ত্রিকে কক্সবাজারে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় মানবপাচার চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল। অবশেষে পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার হন তারা।
জানা যায়, ওই ছয়জন শ্রমিক কাজের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। নিখোঁজের ৬দিন পর অবশেষে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে টেকনাফের রাজার ছড়া গ্রামের দুর্গম পাহাড় থেকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।
উদ্ধার করার পুলিশ সূত্র জানায়, শহিদুল নামে এক ঠিকাদার জন প্রতি ২০ হাজার টাকা করে তাদেরকে বিক্রি করে দেয়। একটি মানবপাচার চক্র মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য শহিদুলের কাছ থেকে তাদেরকে কিনে নেয়।
উদ্ধার হওয়া খালেদ হাসান (১৯) বলেন, আমাদের যে ঠিকাদার ছিলেন তার শ্যালক এসে আমাদের খাওয়া দাওয়া করায়। এর পর আমাদেরকে একটি সিএনজিচালিত রিকশায় তুলে দেয়।পরে কয়েকবার রিকশা বদলানো হয়। আমাদেরকে বলে কাজের সাইট একটু পরে। একটু পরে বলে বলে আমাদের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পাহাড়ে নিয়ে যায়। এর পর আমরা জানতে পারি আমাদের ঠিকাদার আমাদেরকে জন প্রতি ২০ হাজার টাকা করে বিক্রি করে দিয়েছে। তারা আমাদের কোনো নির্যাতন করেনি। তিনবেলা খাবার দিয়েছে। আমাদের কাছে কোনো টাকা পয়সা ছিল না। তারা আমাদের মোবাইলগুলো নিয়ে যায়।
আব্দুল জলিল (৫৫) বলেন, শহিদুল নামে এক রাজমিস্ত্রির সঙ্গে আমরা দুই মাস কাজ করেছি। এই সূত্রে তার সঙ্গে পরিচয়। আমরা বাড়িতে যাওয়ার পর ৮ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সে আমাদেরকে শুধু কল করে। প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ বার কল দিয়ে বলত কাজে আসো তোমরা। বলতো ভালো কাজ আছে। ৫ তালা বিল্ডিংয়ে তোমরা কাজ করবা। শহিদুল আমাদের এখানে এনে দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। আমাদের খোঁজে যখন নিউজ হয়, ইন্টারনেটে আমাদের ছবি ছড়িয়ে পড়ে তখন তারা আমাদের বলে তোমাদের এনে আমরা আতঙ্কে আছি। তোমরা মালয়েশিয়া কি যাবে না। আমরা বলছি আমরা মালয়েশিয়া যাব না, আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দাও। নিউজের কারণে পুলিশের আসা যাওয়া শুরু হয়। তখন তারা আমাদের রাতে ছেড়ে দেয়। এর পর পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে। আমরা কাউকে চিনতে পারিনি। তবে দেখলে চিনতে পারব।
শাহিন আহমদ (২১) বলেন, তারা আমাদের নিয়ে একটি ঘরে রাখে। একদিন পরে তাদের বস আসে। বস এসে বলে আমাদের মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দিবে। সেখানে আমরা গেলে অনেক কাজ করতে পারব অনেক টাকা ইনকাম করতে পারব। এরকম বিভিন্ন ধরনের লোভ দেখায় তারা আমাদের। কিন্তু আমরা মানিনি। আমরা বলছি আমাদের মা বাবার কাছে চলে যাব। আমরা রাজমিস্ত্রির কাজের জন্য আসছি, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য আসিনি আমরা। এর পরও আমাদের ছাড়েনি। যখন আমাদের বাড়ি থেকে খোঁজ নেওয়া শুরু হয় নিউজ হয় তখন তারা আমাদের ছেড়ে দেয়। এর পর টেকনাফ থানা পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে।
এর আগে গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে জকিগঞ্জ উপজেলার ৪নং খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০), ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯) ও মৃত সরবদির ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫) সিলেট থেকে থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। ১৬ এপ্রিল সকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার পৌঁছা পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এর পর থেকে তাদের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পরিবারের লোকজন বারবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কারো কোনো সন্ধান পাচ্ছিলেন না। এর পর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তাদের খোঁজ চেয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। পরে মঙ্গলবার রাতে টেকনাফের রাজার ছড়া গ্রামের দুর্গম পাহাড় থেকে তাদের উদ্ধার করে টেকনাফ থানা পুলিশ।
ছয়জনকে খুঁজে পাওয়ায় নিখোঁজদের পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমসহ সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এমাদ উদ্দিনের চাচাতো ভাই আব্দুল বাছিত দুলাল।