
নিজস্ব প্রতিবেদক:: সাংবাদিকতা যদি হয় জাতির বিবেক, তবে সেই বিবেকের নির্ভীক কণ্ঠস্বর ছিলেন ফররুখ আহমদ চৌধুরী—সিলেটের সংবাদমাধ্যমে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, সত্য ও ন্যায়ের অগ্রদূত।
১৯৭৯ সালে যখন তিনি কলম হাতে নেন, তখন সাংবাদিকতা ছিল নৈতিকতা ও আত্মত্যাগের এক কঠিন অঙ্গন। তিনি এই মহান পেশাকে বেছে নিয়েছিলেন আত্মমর্যাদা, আদর্শ ও সমাজচেতনাকে ধারণ করে। দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে তিনি কখনো নিজের বিবেককে বিলিয়ে দেননি কালো টাকার কাছে, মাথা নত করেননি কোনো ক্ষমতার সামনে। সত্য, ন্যায় এবং জনগণের পক্ষে নির্ভীক উচ্চারণই ছিল তাঁর মূল আদর্শ।
তিনি ছিলেন সাপ্তাহিক ‘সিলেটের’ সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দৈনিক ‘কাজিরবাজার’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান সম্পাদক। পাশাপাশি দেশবার্তা, বিভিন্ন সাময়িকী ও জাতীয় পত্রিকায় লিখেছেন সাহসী ও সমাজসচেতন লেখা। তার লেখায় উঠে এসেছে দুর্নীতি, বৈষম্য ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ।
সাংবাদিকতার বাইরে মানবসেবায়ও তার অবদান অবিস্মরণীয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী হলেও, ফররুখ আহমদ চৌধুরী সবসময় সিলেটবাসীর সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে থাকেন। নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন ‘খয়রুন্নেছা-বশির ফাউন্ডেশন ইউএসএ (ইনক)’, যার মাধ্যমে বিপন্ন সাংবাদিকদের সহযোগিতা, গরীব-অসহায়দের সহায়তা ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন একনিষ্ঠভাবে।
তিনি মানবাধিকার সাংবাদিক কল্যাণ সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং আমেরিকাস্থ বাংলাদেশ দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তার মানবিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বহু সম্মাননা স্মারক ও পুরস্কার।
সাহিত্যাঙ্গনেও তার বিচরণ প্রশংসনীয়। তিনি একাধারে কলামিস্ট, ছড়াকার ও গবেষক। তার লেখা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে—‘বাংলা পিডিয়া (সিলেট খণ্ড)’, ‘সূর্যোদয়’, ‘সুগন্ধা’, ‘একুশের ছড়া’ ইত্যাদি। তার সাহিত্যকর্মে যেমন আছে সমাজবাস্তবতার প্রতিচ্ছবি, তেমনি আছে সৌন্দর্য ও সত্যের জয়গান।
খেলাধুলা ও সামাজিক সংগঠনগুলোতেও রয়েছে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি। তরুণদের খেলাধুলায় উৎসাহ প্রদান, সমাজকল্যাণমূলক কাজে সহযোগিতা, আর্তমানবতার সেবায় নিরবিচারে পাশে দাঁড়ানো—এই সকল কাজই তিনি করে চলেছেন নিঃস্বার্থভাবে।
সাধারণ জীবনযাপন, মিশুক স্বভাব ও প্রচারবিমুখতা তার ব্যক্তিত্বকে করেছে আরও মহিমান্বিত। তিনি কখনো যশ বা খ্যাতির পেছনে ছোটেননি; বরং যশ ও খ্যাতি নিজেই ছুটে গেছে তার কাছে।
খুলিয়াটুলার কৃতিসন্তান ফররুখ আহমদ চৌধুরী শুধুই একজন সাংবাদিক নন, তিনি সময়ের সাক্ষী, সমাজের দর্পণ ও মানবতার প্রতীক। সিলেটের ইতিহাসে সত্যনিষ্ঠ, সাহসী ও প্রজ্ঞাবান সাংবাদিকতার যে যে অধ্যায় রয়েছে, তার অনেকগুলোতেই রয়েছে এই মানুষটির দীপ্ত স্বাক্ষর।
আমরা এই মহান ব্যক্তিত্বের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও কর্মজীবনের অব্যাহত সাফল্য কামনা করি।