
সিকারি ডেস্ক:: বদলীর আদেশ হলেও কর্মস্থল ছাড়তে চান না সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই নিয়াজ মো. শরীফ। গত ২৫ আগস্ট সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের সই করা অফিস আদেশে তাকে সহ আরো ৩৫ জনকে বদলি করা হয়। পাথর লুটকাণ্ডে আলোচিত কোম্পানীগঞ্জ থানায় কর্মরত ৭ পুলিশ সদস্য রয়েছেন। মূলত মামলা বাণিজ্য সহ নানা কারণে নিয়াজ মো. শরীফ কোম্পানীগঞ্জ থানা ছাড়তে চান না বলে জানা গেছে।
অফিস আদেশে বদলীকৃত কোম্পানীগঞ্জ থানার ৩ জন উপপরিদর্শক (এসআই) ও ১ জন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আর ৩ জন কনস্টেবল রয়েছেন। তার মধ্যে প্রত্যেকেই কোম্পানীগঞ্জ থানা ছেড়ে চলে গেছেন। শুধু রয়েছেন গেছেন উপ-পরিদর্শক নিয়াজ মো. শরীফ। যাকে কোম্পানীগঞ্জ থানা থেকে বালাগঞ্জ থানায় বদলী করা হয়েছিল। কিন্তু ‘মধুর হাড়ি’ পাওয়া কোম্পানীগঞ্জ থানা ছাড়তে কোনোভাবেই রাজি না তিনি। যে করেই হোক কোম্পানীগঞ্জ থানায় থাকতেই হবে বলে বিভিন্নজনকে ইতিমধ্যে বলতেছেন তিনি।
নিয়াজ মো. শরীফ কোম্পানীগঞ্জ থানায় সেকেন্ড অফিসার হিসেবে এতদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সেকেন্ড অফিসার থাকার সুবিধার্তে থানায় একক আধিপত্য বিরাজ করতেন তিনি। অনেকসময় থানার সাবেক ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনানও তার কাছে পাত্তাই পেতেন না। থানার বড় বড় মামলার দায়িত্ব যার কারণে তার কাছেই দেওয়া হতো। গেল ১৫ আগস্ট কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ এলাকায় গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারি থেকে কোটি কোটি টাকার পাথর লুটপাটের ঘটনায় ১৫০০ থেকে ২০০০ জনকে আসামি করে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) মহাপরিচালক মো. আনোয়ারুল হাবীর বাদী হয়ে মামলা করেন। আর এই মামলার দায়িত্ব দেওয়া হয় থানার সেকেন্ডে অফিসার উপ-পরিদর্শক নিয়াজ মো. শরীফকে। সেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলার আসামী যেখানে ২ হাজার, সেখানে মাত্র ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ। এই মামলায় এখন চুক্তি করে গ্রেফতার বা হয়রানী করার অভিযোগ রয়েছে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিয়াজ মো. শরীফের বিরুদ্ধে। মামলায় অজ্ঞাত আসামী হওয়াতে প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতার না করে বিভিন্নভাবে উপজেলার ব্যবসায়ীদের হয়রানী করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। টাকা দিলেই শান্তিতে বাড়ি থাকতে পারবেন আর না দিলেই অ্যারেস্ট এবং মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। তবে তারা কেউই হয়রানীর ভয়ে নাম প্রকাশ করেননি প্রতিবেদকের কাছে। নানা হয়রানীর কারণে এখন ভোলাগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষজনও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। যেকারণে বিভিন্ন গ্রাম এখন পুরুষহীন রয়েছে।
এখন এই মামলায় যাতে বাণিজ্য ভালোভাবে করা যায়, সেজন্য তিনি জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে তাকে বদলী করলেও তিনি কোম্পানীগঞ্জ থানা ছাড়তে চাচ্ছেন না। এজন্য ঢাকা থেকে শুরু করে উপরমহলে চলছে তার জোর তদবীর। ইতিমধ্যে তিনি তদবীরের জন্য ঢাকা থেকে ঘুরে আসছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে ভোলাগঞ্জের শাহ আরেফিন রাস্তার বাবুলনগর গ্রামের রাস্তায় পুলিশ দাঁড়িয়ে ১০০ টাকা করে গাড়িপ্রতি চাঁদা উত্তোলন করতো। পরে একারণে কোম্পানীগঞ্জ থানার ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে কোম্পানীগঞ্জ থানা থেকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। কিন্তু এর মূলহোতা নিয়াজ মো. শরীফ তার প্রভাব-বিস্তারের কারণে আড়ালেই থেকে যান।
এছাড়াও উপজেলার দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের খাগাইলের গরুর বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে বড় অঙ্কের টাকা তার কাছে আসতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে নিয়াজ মো. শরীফ বলেন, ‘আমি জয়েন হই নাই। ২/১ দিনের মধ্যে ডিপার্চার নিবো আরকি। আমার মামলাগুলো বুঝাই দেওয়া হয় নাই। এজন্য বুঝে উনারা নিচ্ছেন। তাই স্যারেরা রাখছেন মামলাগুলো বুঝাইয়া দেই, তারপর। এটাতো কর্তৃপক্ষের নির্দেশ।’
তদবীরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমিতো ঢাকায় যাই-ই নাই। আর আমার বাড়ি ওদিকে, আমিতো যেতেই পারি।’ রিসেন্টলি গেছেন বললে বলেন, ‘রিসেন্টলি আমি সাক্ষ্য দিতে গেছি, আমার ঢাকায় সাক্ষ্য ছিল। আমার বিরুদ্ধে যে তথ্য দিয়েছে, সে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে।’
এবিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ জানান, ‘আমিতো নতুন এসেছি। আমি বিষয়টা দেখতেছি।’
এবিষয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মঙ্গলবার রাতে দৈনিক সিলেটের ডাককে জানান, ‘কে কি করলো, তাতে কিছু যায় আসে না। আমরা অর্ডার করছি, এটা ক্যান্সেল না হওয়া পর্যন্ত এটা বলবৎ থাকবে। প্রশাসনিক কারণে তাদের কাছে কিছু মামলা থাকে, সেগুলো বুঝিয়ে দিতে হয়তো একটু সময় লাগে। তো এখানে অন্য কোনো সুযোগ নাই। পোস্টিং হইছে, ক্যান্সেল না হলে এটাই একটিভ থাকবে।’