
সিকারি ডেস্ক:: সিলেটের ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর লুটের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের দায় খতিয়ে দেখতে প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরুর তথ্য দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শিগগিরই এ বিষয়ে টিম গঠন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার দুদকের এনফোর্স টিম সাদা পাথর লুটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সুপারিশ করে প্রতিবেদন দিলে কমিশন তা অনুমোদন দেয়।
জানা গেছে, দুদকের এনফোর্স টিমের অনুসন্ধানে সাদা পাথর লুটপাটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪২ জন রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা উঠে আসে। তার মধ্যে, বেশ কিছু সরকারি কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে ওএসডি করা হয়েছে।
দুদকের প্রাথমিক প্রতিবেদনে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার, কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাছনাত, ঊর্মি রায়, আবিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ উজায়ের আল মাহমুদ আদনানকে দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া, ওই এলাকার দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যদেরও দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
রাজনীতিবিদদের মধ্যে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, সদস্য হাজি কামাল (পাথর ব্যবসায়ী), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে দুদু, সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক রুবেল আহমেদ বাহার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুসতাকিন আহমদ ফরহাদ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো. দুলাল মিয়া ওরফে দুলা, যুগ্ম আহ্বায়ক রজন মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদল নেতা জসীম উদ্দিন, সাজন মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কর্মী জাকির হোসেন, সদস্য মোজাফর আলী, মানিক মিয়া, সিলেট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মকসুদ আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহ পরাণ, কোষাধ্যক্ষ (বহিষ্কৃত) শাহ আলম ওরফে স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম এবং পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্স, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) কর্মী বিলাল মিয়া, শাহাবুদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু, কর্মী মনির মিয়া, হাবিল মিয়া ও সাইদুর রহমান, সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. ফকরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, এনসিপির সিলেট জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন ও মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।
অনুসন্ধানে সাদা পাথর লুটের সঙ্গে আরো ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন- ভোলাগঞ্জের আনর আলী, উসমান খাঁ, ইকবাল হোসেন আরিফ, দেলোয়ার হোসেন জীবন, আরজান মিয়া, মো. জাকির, আলী আকবর, আলী আব্বাস, মো. জুয়েল, আলমগীর আলম ও মুকাররিম আহমেদ।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্তের শূন্য রেখার কাছে প্রায় ১৫ একর এলাকাজুড়ে সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র অবস্থিত। পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি না থাকলেও গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এখানে নির্বিচারে পাথর উত্তোলন চলছে। পর্যটন এলাকাটি সংরক্ষিত পরিবেশ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও প্রায় ৮০ ভাগ পাথর তুলে নেওয়ায় পুরো এলাকাটি অসংখ্য গর্ত ও বালুচরে পরিণত হয়েছে।
পাথর লুটের ঘটনায় দেশ-বিদেশে সমালোচনা শুরু হলে নড়েচড়ে বসে সরকার। সরকারের উপদেষ্টারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পাথর লুটপাটের ঘটনা তদন্তে নামে দুদক। গত ১৩ আগস্ট দুদকের সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকায় অভিযান চালায়।