• ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রহস্যঘেরা এডভোকেট মিসবাহ অপহরণ কান্ড 

sylhetcrimereport
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৬, ২০২৪
রহস্যঘেরা এডভোকেট মিসবাহ অপহরণ কান্ড 
সিকারি ডেস্ক: রহস্যঘেরা সিলেটের আলোচিত ঘটনা এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ কান্ড। নিজেই করেছেন লুকোচুরি,  ঘটনার প্রথম থেকে শেষ নানা প্রশ্ন এখনো অজানা। শুক্রবার ভোরে হাসপাতালে ভর্তির দিন পরিবার থেকে ডাক্তারদের জানানো হয়েছিল, তিনি অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন। কিন্তু শারীরিক অবস্থা দেখে ডাক্তার ধরে ফেললেন তিনি হামলার শিকার হয়েছেন। তখন তাহার হাতে পায়ে কোপানোর চিহ্ন পাওয়া যায়। শরীর থেকে রক্ত ঝরছে এমন অবস্থায় শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত নগরীর সুবহানীঘাটে অবস্থিত প্রাইভেট ক্লিনিক আল হারমাইন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরপর থেকে আবারও নিখোঁজ আলোচিত মিসবাহ সিরাজ। নগরের ফাজিলচিস্তস্থ বাসায় ঝুলছে তালা। স্বজনরাও জানেন না খোঁজ। পরিবারের লোকজনও ফোন ধরছেন না। অনুসন্ধান চালিয়ে পুলিশ ঘটনার কাছাকাছি গেলেও মিসবাহ সিরাজ তো দূরের কথা, পরিবারের কারোই নাগাল পাচ্ছে না। ফলে ঘটনা নিয়ে পুলিশেরও গা-ছাড়া ভাব। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগকারীও নেই। ভিকটিমও নেই। ফলে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি জানান, যদি পরিবার কিংবা ভিকটিমের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। স্বজনরা জানান, ঘটনায় ভড়কে গেছেন আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পিপি এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও তার পরিবার। মিসবাহ সিরাজ তো অপরিচত কেউ নয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। ফলে সিলেটের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন দাপট দেখিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ শাসনামলের শুরুতে তিনি সিলেটের রাজনীতিতে ঠক্কর দিয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে। শেষবার ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি সিলেট-১ আসন থেকে প্রার্থী হতে হতেও হননি। একাধিকবার সিটি নির্বাচন করার তোড়জোড় করেছেন। বর্তমানে সিলেট আওয়ামী লীগের যে কয়েকজন প্রবীণ নেতা বেঁচে আছেন, তাদের মধ্যে মিসবাহ সিরাজ একজন। ৫ই আগস্ট প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর পরই মিসবাহ সিরাজ আড়ালে চলে যান। এরপর হন মামলার আসামি। বর্তমানে তিনি পুলিশের খাতারও তালিকাভুক্ত আসামি। এই মিসবাহ সিরাজকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নগরের ফাজিলচিস্ত এলাকা থেকে মুখোশপরা সশস্ত্র যুবকরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর পরিবারের সঙ্গে দরকষাকষির মাধ্যমে ২৫ লাখ টাকা মুক্তি দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। তারা জানান, তার আগে মিসবাহ সিরাজের হাত-পায়ের উপর্যুপরি কোপানো হয়। এতে তার পা ও হাতের কয়েকটি রগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনাটি নিয়ে সিলেট আওয়ামী পরিবারে তোলপাড় চলছে। পলাতক থাকা নেতা এ নিয়ে নিন্দা জানাচ্ছেন। কিন্তু রহস্যময় নীরব মিসবাহ সিরাজের পরিবারের। ঘটনার পর থেকে গত তিনদিন কয়েকজন নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা হয়। তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও মূল ঘটনা বলতে নারাজ। ঘটনার সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে সুবিদবাজার কেন্দ্রিক অপরাধ জগতও। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন মিসবাহ সিরাজেরই ঘনিষ্ঠজন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান। তার কারণে ওই এলাকা বিরোধী দলের কেউ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে পারেননি। প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের ফলে বদলেছে দৃশ্যপটও। এখন ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের। আর আফতাবের সঙ্গে থাকা কর্মীরাও অবস্থান বদল করেছেন। তারা এখন বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠনের ছায়াতলে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে সুবিদবাজার কেন্দ্রিক অপরাধ জগৎ এখন আগের চেয়ে অনেক চাঙা। ঘটনায় দোষ দেয়া হচ্ছে সর্বদলীয় সিন্ডিকেটকে। এ সিন্ডিকেটের একাংশ পূর্বের মিসবাহ সিরাজের শেল্টারেই ছিল। মিসবাহ’র স্বজনরা জানান, অপহরণের পর মিসবাহ সিরাজের আর্তনাদের পরিবারের সদস্যরা ভিত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তখন তারা অনেক মহলের সাহায্য কামনা করেও পাননি। তাদের সামনে একটাই পথ খোলা ছিল মিসবাহকে জীবিত উদ্ধার করা। পাশেই মিসবাহ সিরাজের শ্বশুরবাড়ি। সেখানকার লোকজন রাতেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে চলে আসেন। পথ খুঁজে বের করেন তারাই। এরপর এক নেতার মধ্যস্থতায় দফারফা হয় টাকার বিনিময়ে। আর রাতে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে বড় অঙ্কের টাকা জোগাড় করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। একদিকে ছিল মিসবাহ’র জীবন আর অন্যদিকে টাকা। ফলে পরিবারের লোকজনের মারফতেই রাতে টাকা জোগাড় করে অপহরণকারীদের হাতে তোলা দেয়া হয়। এরপর জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাকে। মিসবাহ’র ঘটনা নিয়ে চোখ-কান খোলা সিলেটের সব মহলের। ঘটনাটিকে খাটো করে দেখছেন না কেউ। সাহায্যে এগিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও। কিন্তু পরিবারের কাছ থেকে সাড়া নেই। বর্তমানে মিসবাহ সিরাজ কোথায় আছেন, সেটিও তার পরিবারের সদস্যরা ছাড়া কেউ বলতে পারছেন না। তাকে অজ্ঞাত স্থানে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান স্বজনরা।