
সিলেট নগরীর চৌহাট্টাস্থ ‘শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল’র পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে চকচকে ঝকঝকে আটতলা ভবন। সিলেট বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের প্রত্যয় নিয়ে ‘সিলেট জেলা হাসপাতাল’র জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল ভবনটি। ১৫তলা ভিতবিশিষ্ট হাসপাতালটির ৮তলা পর্যন্ত কাজ অনেক আগেই শেষ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু ভবন নির্মাণের পর জানা যায় হাসপাতালটি ‘বেওয়ারিশ’! এই হাসপাতালের নাকি কোন ‘অভিভাবক’ নেই!
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে তাদের অনুমতি ছাড়াই নির্মিত হয়েছে হাসপাতালটি। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় পুরো ভবনটি এখন পড়ে আছে অরক্ষিত অবস্থায়। নবনির্মিত হাসপাতালটিতে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ ও পদ সৃষ্টির জন্য বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) সিলেটের পক্ষ থেকে কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেও সাড়া মিলেনি। ফলে প্রায় শতকোটি টাকার হাসপাতালটি এখন দাঁড়িয়েছে স্বাস্থ্যখাতের গলার কাটা হিসেবে।
জানা গেছে, আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকাবস্থায় ‘সিলেট জেলা সদর হাসপাতাল’ নামে আড়াইশ’ শয্যার একটি নতুন হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তার মেয়াদকালে কাজ শুরু করতে না পারলেও তার সহোদর ড. এ কে আবদুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রায় ৭ একর ভূমির উপর হাসপাতালটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হলেও মূলত ২০২০ সালের জানুয়ারিতে গণপূর্ত বিভাগের অধীনে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে ১৩তলা ভিতবিশিষ্ট হাসপাতালটির ৮তলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৮তলা ভবন নির্মাণের পাশাপাশি রঙ, ইলেকট্রিক্যাল ওয়ারিং, টাইলস, গ্লাস, দরজা ও জানালাসহ অবকাঠামোগত অনেক কাজই সম্পন্ন হয়ে গেছে।
হাসপাতালটির নকশায় বেজমেন্টে পার্কিং, প্রথম তলায় টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম; দ্বিতীয় তলায় আউটডোর, রিপোর্ট ডেলিভারি ও কনসালট্যান্ট চেম্বার; তৃতীয় তলায় ডায়াগনস্টিক; চতুর্থ তলায় কার্ডিয়াক ও জেনারেল ওটি, আইসিসিইউ, সিসিইউ; পঞ্চম তলায় গাইনি বিভাগ, অপথালমোলজি, অর্থপেডিক্স ও ইএনটি বিভাগ এবং ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় ওয়ার্ড ও কেবিনের ব্যবস্থা রাখা হয়।
হাসপাতালটির ৮তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হওয়ার পর এটি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। নতুন হাসপাতালটি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধীনে পরিচালিত হবে, নাকি সিভিল সার্জন অফিসের অধীনে চলবে এটা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। কিন্তু ভবন নির্মাণের আগে এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এখন কেউই হাসপাতালটি পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চাইছে না। ভবনের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার জন্য গণপূর্ত বিভাগ কয়েক দফা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠালেও জটিলতার অবসান ঘটেনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নির্মাণ কাজ শুরুর আগে একজন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের কথা থাকলেও গণপূর্ত বিভাগ সেটি করেনি। নিয়োগ দেওয়া হয়নি তত্ত্বাবধায়কসহ কোন জনবল। ফলে এই জটিলতা দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) সিলেটের পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান জানান, হাসপাতালটি নির্মাণের আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। হাসপাতালটি কে পরিচালনা করবে সে ব্যাপারেও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। কোন তত্ত্বাবধায়ক ও জনবল নিয়োগ ছাড়াই হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে হাসপাতাল পাহারা দেওয়ার মতোও কোন লোক নেই। অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে হাসপাতাল। তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে কিন্তু এখনো ইতিবাচক সাড়া মিলেনি।