• ১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গোয়াইনঘাটে ভারতীয় চোরাই গরু থেকে লাগামহীন চাঁদাবাজি

Desk
প্রকাশিত মার্চ ৩, ২০২৫
গোয়াইনঘাটে ভারতীয় চোরাই গরু থেকে লাগামহীন চাঁদাবাজি

ছবি : সংগৃহীত

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় ভারতীয় চোরাই গরু থেকে লাগামহীন ভাবে চাঁদাবাজি করছে ‘চাচা-ভাতিজা’ নামক সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত রয়েছেন একাধিক বিএনপি নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান। ফলে প্রকাশ্যে এই বাজারে বিক্রি হচ্ছে দৈনিক হাজারো ভারতীয় চোরাই গরু। বাজারের রশিদ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন দৈনিক লাখ লাখ টাকা।

জানা গেছে, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে দেশে প্রবেশ করছে দৈনিক হাজার হাজার গরু। এই গরু গুলো উপজেলার তোয়াকুল বাজারে তোলা হয়। এই বাজার এখন ভারতীয় চোরাই গরুর নিরাপদ স্থান। এখানে শুধু ভারতীয় চোরাই গরু নয় দেশী চুরি হওয়া গরুরও বৈধতা দেওয়া হয়। এই বৈধতার রশিদ দিয়ে দৈনিক লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন চাচা-ভাতিজার সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় তোয়াকুল ইউনিয়নের বিএনপি-যুবদলের নেতারা। এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লোকমান আহমদ এবং এক সাংবাদিক নেতা। বাজারে রয়েছে তাদের একটি লাটিয়াল বাহিনী। এই বাহিনী বাজারের চারপাশ ঘুরে বেড়ায়। কেউ ছবি তোলতে বা ভিডিও ধারণ করতে গেলেই পড়তে হয় ঝামেলায়। এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে এই বাজারে। এদেরকে দৈনিক একটা টাকা দেওয়া হয়। যারফলে এই চক্রের ভয়ে বাজারে কেউ ছবি-ভিডিও ধারণ করতে পারেননি। আর এই লাটিয়াল বাহিনী রাখা হয়েছে এক সাংবাদিক নেতার পরামর্শে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি-সোনারহাট ও দমদমা সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় চোরাই গরু এক সময় হাদারপার বাজারের রাখা হতো। পরে চোরাচালানকারীদের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়। এরপর থেকে হাদারপার বাজার থেকে অন্যত্র গরু সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা শুরু করেন চোরাই ব্যবসায়ীরা। তখনই তোয়াকুল বাজারের ইজারাদার চাচা-ভাতিজা সিন্ডিকেটের সদস্যরা চোরাচালানকারীদের ম্যানেজ করেন এবং অবৈধ গরুর বৈধ করার রশিদ প্রদান করেন। তাদের রশিদ নিয়েই গোয়াইনঘাট থেকে দৈনিক শত শত গাড়ী গরু যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

তোয়াকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা লোকমানের মাধ্যমে ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য বেলাল উদ্দিন তাদের সরকারের আমলে তোয়াকুল বাজার পশুর হাটের ইজারা বাগিয়ে নেন। কিন্তু তাদের সরকারের আমলে ভারতীয় গরু থেকে সুবিধা নিতে না পারলেও বর্তমানে বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

একাধিক গরুর মালিকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ইজারাকৃত রশিদের মাধ্যমে প্রতিটি গরু কিংবা মহিষ বাবত পাঁচশত টাকা লিখা থাকলেও অলিখিতভাবে পশুর ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতিটি গরু-মহিষ ছোট-বড় আকার ভেদে ১ হাজার থেকে ১৫’শ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। আর রাস্তায় পুলিশি ঝামেলায় পড়বেনা এই কথা বলে রুহুল আমিন পুলিশের নামে গাড়ি প্রতি ১৫’শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন। সেই টাকা সাংবাদিক নেতা ও বিএনপি নেতাদের বন্টন করা হয়।

তবে ইজারাদার বিল্লাল উদ্দিনের দাবি বৈধ-অবৈধ গরু দেখার সময় নেই। গুরু বাজারে আসলেই তিনি রশিদ দিয়ে টাকা আদায় করবেন। রুহুল আমিন পুলিশের নামে যে টাকা আদায় করেন সেটি নিরাপত্তার জন্য বলে দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে রুহুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা আদায়য়ের বিষয়টি স্বীকার করে প্রতিবেদককে চায়ের দাওয়াত দেন এবং স্থানীয় এক সাংবাদিক নেতার সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন।

গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ,‘‘আমি নতুন এসেছি এজন্য বিষয়টি অবগত নই। আপনি যেহেতু বলছেন আমি খোঁজ নিয়ে অবশ্যই এর ব্যাবস্থা নেব ।’’

সিলেট পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান জানান, গোয়াইনঘাট থানার সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় গরু মহিষ আসার বিষয়ে আমার জানা নাই। তবে এ ধরনের অপরাধের সাথে আমার কোন পুলিশ অফিসার জড়িত থাকার তথ্য প্রমানাদি পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।