
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে দীর্ঘদিনের স্বপ্নের বৃহৎ ‘যাদুকাটা’ সেতুর নির্মাণ কাজ গত ছয় মাস ধরে থমকে আছে। ৫ আগষ্টের পর জোড়াতালি দিয়ে নির্মাণ কাজ হলেও গত ৬ মাসের মধ্যে এক ইঞ্চিও কাজ হয়নি। ফলে নদীর দুই পাড়ের লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সীমান্ত এলাকা সহ তিন (তাহিরপুর, মধ্যনগর- বিশ্বম্ভরপুর) উপজেলার মানুষের যাতায়াতের সুবিধা, পর্যটন ও ব্যবসা- বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে যাদুকাটা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতুর নির্মাণের মেয়াদ ছিল আড়াই বছর। এর মধ্যে সাড়ে ৬ বছর অতিবাহিত হলেও এর কাজ এখনও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে সময় বাড়ানো হয়েছে ৪ বার।
জানা যায়, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে তমা কন্সট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর উপর সেতু নির্মাণের কাজ পায়। সেতু নির্মাণের নির্ধারিত সময় দেয়া হয় ৩০ মাস। কিন্তু গত সাড়ে ৬ বছরেও এর নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে না। ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুর জন্য ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৮ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশনের সঙ্গে চুক্তি হয়। ৪ দফা সময় বাড়িয়ে এ পর্যন্ত কাজ করা হয়েছে ৭৫ শতাংশ। তারা বিল নিয়েছে ৭৮ ভাগেরও বেশি। তারা ইতোমধ্যে ৬৪ কোটি ৯৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বিল উত্তোলন করেছে। কাজের চেয়ে ১ কোটি টাকা বেশি বিল নিলেও সেতুর নির্মাণ কাজ এখনো থমকে আছে।
উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের যাদুকাটা নদীর ওপর শাহ আরেফিন (র.) ও অদ্বৈত মহাপ্রভু মৈত্রী সেতু নামে এর নাম করণ করা হয়। শুরুতে এর কাজ পুরোদমে শুরু হলেও গত ৬ মাসে এক ইঞ্চিও এর কাজ হয়নি। এ সেতুটি দ্রুত নির্মাণ হলে পর্যটনখাতের নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে ভাটি অঞ্চলে। এটি হবে জেলার সবেচেয় দীর্ঘতম আধুনিক সেতু।
গত সোমবার সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গত ৬ মাস আগে সেতুর সমপুন্ন পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। স্পেন ১৫ টির মধ্যে ১২টি হয়েছে। ৭৫টি গার্ডারের মধ্যে ৬০ টির কাজ শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০টি গার্ডার ও ৩টি স্পেন নির্মাণের কাজ বাকি রয়েছে। গত জুন মাসের বন্যার সময়ে বালুভর্তি বাল্কহেডের ধাক্কায় একটি গার্ডার ভেঙে পানিতে পড়লে সেতুর নির্মাণ কাজ থমকে পড়ে।
মোল্লা পাড়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক হাসান শাহ নিপু বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তারা কখনও কাজ বন্ধ রাখে, আবার কখনও লোক দেখানো কাজ করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও ঢিলেমি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লাউড়েরগড় গ্রামের বালু পাথর ব্যবসায়ি মো. রইস মিয়া বলেন, এ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি টালবাহানা করছে। গত ৬ মাস ধরে সেতুর কাজ থমকে আছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অনাগ্রহী হলে, তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের দাবি জানান তিনি।
বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন জানান, যাদুকাটা নদী সীমান্তের বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। দুই পাড়ের লাখো মানুষ সেতুর জন্য অপেক্ষা করছে। এর নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ হলে এলাকার মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প ম্যানেজার মোহাম্মদ নাসির বলেন, বিভিন্ন কারণে বিলম্ব হচ্ছে সেতু নির্মাণকাজ। ইতোমধ্যে সেতু’র ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে চেষ্টা করা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন জানান, প্রশাসনিক জটিলতায় কিছুদিন এ সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। ইতোমধ্যে সেতুর প্রায় ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ সমপুন্ন হতে আরো এক বছর সময় লাগতে পারে।