• ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সময়সীমা শেষ হলেও এখনও কাজ বাকি ৪৫ ভাগ

Desk
প্রকাশিত মার্চ ২, ২০২৫
সময়সীমা শেষ হলেও এখনও কাজ বাকি ৪৫ ভাগ

ছবি : সংগৃহীত

পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে। বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ থেকে জায়গাটির দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। ফলে সুনামগঞ্জ জেলায়ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হয়। প্রবল বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের জন্য ভাটির জেলা সুনামগঞ্জে দেখা দেয় অকাল বন্যা। আর মার্চের দিকে শুরু হওয়া এই বন্যায় হাওরের বোরো ধান ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ফলে ধান রক্ষায় প্রতি বছর সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরে নির্মাণ করা হয় ফসলরক্ষা বাঁধ।

এ বছরে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের নির্মাণ ও সংস্কার কাজে শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রæয়ারির মধ্যে শতভাগ শেষ করার কথা। কিন্তু এই সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় বেশিরভাগ বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ এর নেতা ও কৃষকদের অভিযোগ- এখনো পর্যন্ত ৫৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। এখনও কাজ বাকি রয়েছে আরও ৪৫ ভাগ। এছাড়া বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় এই বাঁধের কাজ ৮৮ ভাগ শেষ হয়েছে। তবে স্থানীয় কৃষক ও লোকজনের দাবি, অনেক বাঁধে এখনো মাটির কাজ শেষ হয়নি। সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ঢলে বাঁধ ভেঙে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ৫৮৮ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ শুরু হয় ১৫ ডিসেম্বর। হাওরের বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন করতে ৬৮৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়েছে। এ জন্য সরকার ১২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের কৃষক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা সাধারণ কৃষক। টাকা-পয়সা ঋণ করে হাওরে ধান চাষ করছি। যদি বাঁধের সঠিক কাজের অভাবে হাওর ডুবে যায়, তবে ঋণের টাকা ফেরত দেবো কীভাবে? পরিবার নিয়ে খাবো কী, আর চলবো কীভাবে? খুব চিন্তায় আছি।

আরেক কৃষক মাজিদ মিয়া বলেন, হাওরের ধান নিয়ে সবসময় চিন্তায় থাকতে হয়। বাঁধের এখনো মাটির কাজ চলছে। কোন দিন শেষ হবে জানি না। ২০২২ সালে পানির চাপে হাওরের বাঁধ ভেঙে সব ধান নষ্ট হয়ে যায়। এবার সবচেয়ে বড় ভাঙা অংশের কাজ এখনো শেষ হয়নি। জানি না এবার কী আছে কপালে?

‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’র সুনামগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন বলেন, বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। এই কাজের যে অগ্রগতি, এখনো পর্যন্ত ৫৫ ভাগ কাজ শেষ হয়নি। বিভিন্ন উপজেলায় দেখেছি, বালু মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। এখানে কৃষকদের নিয়ে একটা তামাশা শুরু করছে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। অক্ষত বাঁধের ঘাস কেটে, মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে আবার বাঁধের উপর দিচ্ছে। এটিকেই নতুন বাঁধ দাবি করা হচ্ছে। মুলত এটা শুভঙ্করের ফাঁকি। তিনি আরো বলেন, বাঁধের কোনো অগ্রগতি নেই। কয়েকটি বাঁধকে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যে, বাঁধগুলোর মাটির কাজ শেষ বলে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। বাঁধের মাপও ঠিকমতো নেই। দায়সারাভাবে কাজ হচ্ছে।

‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ ১৫ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে। ২৮ ফেব্রæয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজের অনেক বাকি। এবার যদি হাওরের ফসল পানিতে ভেসে যায়, তার দায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা বার বার তাগিদ দিয়ে আসছি কিন্তু তাদের অবহেলার জন্য এখনো বাঁধের কাজ শেষ হয়নি।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার বলেন, জেলার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের ৮৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাঁধের কাজের জন্য আরো ১০ দিন সময় বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, এই সময়ের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হয়ে যাবে।