
সিকারি ডেস্ক:: সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বেষ্টনী ও নিরাপত্তা টহল সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এর সাথে জড়িত ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড মুহাম্মদ ইউনূস এর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সিলেট জেলার সদর উপজেলার বড়শালা ছালিয়া কেওয়াছড়া টি গার্ডেন এবং আঙ্গারুয়া মৌজার স্থানীয় আলী আহমদ, আব্দুল মজিদ, মনসুর আহমদ, মো. আবুল খায়ের, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. রাজা মিয়া, মো. মন্তাজ আলী, হাজী সুনু মিয়া, আলাই মিয়া, সিদ্দেক আলীসহ প্রায় সাত শতাধিক স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, আমাদের সিলেট সদর উপজেলার লালবাগবাসীর পূর্বপুরুষদের বসতভিটা, কৃষিজমিসহ বাড়ী-ঘর ওসমানী আন্তজার্তিক বিমানবন্দরের প্রয়োজনে একাধিক এল এ মামলায় অধিগ্রহণ করা হয়। মামলাসমূহ হচ্ছে- ৩/৯৩-৯৪, ৯/৯৬-৯৭, ২/৯৮-৯৯ ইত্যাদি। সম্প্রতি বিমানবন্দর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এলাকাবাসীর ১৫৮.৫২২৫ একর ভূমি স্থায়ীভাবে অধিগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ বে-সামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, ঢাকা সদর দপ্তর কুর্মিটুলা এবং সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবর অধিগ্রহণ প্রস্তাব দাখিল করেন। প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এল এ কেস নম্বর ০১/২০২০-২১ এর মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণের অনুকূলে অর্ধ-সহাশ্রাধিক ব্যক্তির অধিগ্রহণের নোটিশ করা হয়। দীর্ঘ ৪ বছর অতিক্রান্ত হওয়া সত্বেও অধিগ্রহণের কাজ চুড়ান্তকরণ না হওয়ায় আমরা নিরীহ এলাকাবাসী জমি-জমা বিক্রি করাসহ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। অসহায় গরীব মানুষজন বিবাহযোগ্য মেয়ের বিবাহে, সন্তানদের পড়ালেখার খরচ, জটিল রোগের ব্যয়ভার নির্বাহে একান্ত প্রয়োজনে নিজস্ব জায়গা জমি বিক্রি করতে পারছেন না।
এলাকাবাসীর প্রয়োজনের স্বার্থে স্থানীয় গন্যমান্য ও ভোক্তভোগীগণ স্ব-উদ্যোগে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান যে, ডিসি অফিস হতে অধিগ্রহণ কাজে বিলম্ব তথা-কালক্ষেপন হচ্ছে। অথচ আমরা ডিসি অফিস খোঁজ নিয়ে জানতে পারি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এ যাবৎ ৫-৬ বার দাগসূচি, নকশা পরিবর্তন করে পূর্ব অধিগ্রহণের ভূমির দাগসহ ভূমি বরাদ্দ কমিটিতে অনুমোদিত নকশা বহি:ভূত দাগসহ একবার মোট জমির পরিমাণ কম, আবার মোট জমির পরিমাণ বেশি উল্লেখ করে বার বার সংশোধিত প্রস্তাব দাখিল করে আসছেন। প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে যেয়ে আমরা তথা এলাকাবাসী অত্যন্ত দুঃখের সাথে বিষ্ময় প্রকাশ করছি যে, ওসমানী বিমান বন্দরে বর্তমান কর্মরত গুটি কয়েক স্বার্থপর, অসৎ ও লোভী কর্মকর্তার ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের পায়তারার দরুন ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ উদ্দিন এবং বিমানবন্দর ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান এর নেতৃত্বে আরও ২/৪ জন কর্মচারী নামে-বেনামে আতœীয়-স্বজন ও ভূমিখেকোর নামে বিমান বন্দরের আশেপাশে জমি ক্রয় করে একতলা-দুতলা ভবন নির্মাণ করেছেন। অসৎ উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত-নির্মিত জমি ও ভবন অধিগ্রহণ প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এহেন বার বার প্রস্তাব পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংশোধন ইত্যাদি ক্রমাগত করে আসছেন। ফলশ্রুতিতে সরকারি উন্নয়ন কাজে ব্যাঘাতসহ সরকারের প্রচুর পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। নিরীহ অসহায় গ্রামবাসীদের মধ্যে যারা তাদের অপকর্মে শামিল হচ্ছেন না- তাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অধিগ্রহণের আওতা বর্হিভূত করার হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে।
স্মারকলিপিতে আরও উল্ল্যেখ করা হয়- হযরত শাহজালাল (রা:) সফর সঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহ-লালুশাহর নাম অনুসারে লালবাগ গ্রামের নামকরণ হয়। ১০৬৪ নং দাগের হযরত লালূশাহর মাজার শরীফ ও কবরস্থান যেখানে লালবাগ গ্রামের পূর্বপুরুষেরা সাহিত। লালবাগ গ্রামবাসীর জমি-জমা বিমানবন্দর সম্প্রসারণে আরও তিন তিনবার অধিগ্রহণ করা হয়। বর্তমান ০১/২০-২১ এল এ মামলায় লালবাগ গ্রামবাসীর অধিকাংশ ভূমি অধিগ্রহণের আওতায় পড়ে। এলাকাবাসীর জোর দাবি- অন্ততপক্ষে হযরত শাহ-লালুশাহর মাজার শরীফ ও লারবাগ গ্রামের মৃত ব্যক্তিদের কবরস্থান ও পীরস্থান সংরক্ষণ করে সীমানা প্রাচীর দ্বারা সংরক্ষণ করা। এলাকাবাসীর দাবি অনুযায়ী ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসক হযরত শাহ-লালুশাহর মাজার, পীরস্থান ও কবরস্থান সংরক্ষণ রাখা হবে মর্মে এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, হযরত শাহ-লালুশাহর মাজার, পীরস্থান ও কবরস্থানের ভূমি বিমানবন্দরের প্রয়োজনে অধিগ্রহণ করা হলে উহার ক্ষতিপূরণ এলাকাবাসী গ্রহণ করবেন না। এমতাবস্থায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠায় এলাকাবাসীর পূর্ব পুরুষদের বাড়ি-ঘর হারিয়ে অবর্ণনীয় আত্মত্যাগ, সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট ভোগ করার প্রেক্ষিতে বর্তমান ন্যায়পরায়ন সরকারপ্রধানের কাছে এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকগণের আবেদন- দুর্নীতিবাজ বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ, যিনি দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে একই কর্মস্থলে কর্মরত এবং বিমানবন্দর ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান যিনি একাধারে ৬-৭ বছর যাবৎ কর্মরতসহ তাদের দোসর আরও ২-৪ জন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অনতিবিলম্বে ওসমানী বিমানবন্দর থেকে অন্যত্র বদলি করনের আদেশদানসহ সরকারি কাজে বিশ্বাসঘাতকতা এবং সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার প্রচেষ্ঠাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
এ ব্যাপারে বে-সামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, বে-সামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বে-সামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবরে পৃথক পৃথকভাবে অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে।