• ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ পয়লা বৈশাখ : সর্বজনীন উৎসবে মাতবে বাঙালি

Desk
প্রকাশিত এপ্রিল ১৪, ২০২৫
আজ পয়লা বৈশাখ : সর্বজনীন উৎসবে মাতবে বাঙালি

সময়ের চাকা আরও এক পাক ঘুরে এলো। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ সোমবার শুরু হলো ১৪৩২ সনের দিন গণনা। বাঙালির জীবনে বৈশাখ মাসের এই প্রথম দিনটি কেবল বর্ষ শুরুর সূচনা দিনেই সীমিত নয়। নতুন বছরের নতুন দিনটি উদ্যাপিত হয় সবচেয়ে বড় উৎসবের উপলক্ষ হিসেবে। ঋতুভিত্তিক এই অসাম্প্রদায়িক উৎসবে অংশ নেন দেশের ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ধনী, নির্ধন-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

দিনে দিনে দেশের গÐি পেরিয়ে বিস্তার ঘটেছে বৈশাখী উৎসবের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাভাষী মানুষও সেসব দেশে তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী পয়লা বৈশাখে নববর্ষ উদ্যাপনের উৎসব আয়োজন করছেন। ফলে পয়লা বৈশাখের এই উৎসব হয়ে উঠেছে বাঙালির জাতিসত্তা ও সংস্কৃতি উদ্যাপনের এক বিপুল বর্ণাঢ্য মহোৎসব।

নতুন বছর মানেই একটি নতুন সম্ভাবনা। নতুন বছরে, নতুন দিনের এই উদ্যাপনে পুরোনো বছরের ব্যর্থতার গøানি, অক্ষমতার আক্ষেপ কাটিয়ে নতুন উদ্যমে দেশ, জাতি, সমাজ ও ব্যক্তিজীবনের সমৃদ্ধি অর্জনের প্রেরণাও থাকবে। প্রত্যয় থাকবে সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে প্রগতির পথে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার।

আজ সারাদিন মানুষের ঢল নেমেছে রাজপথে। পোশাকে থাকবে লাল-সাদার প্রাধান্য। নারীরা লাল-সাদা শাড়ি, কাচের চুড়ি, দুল-মালায় বাঙালিয়ানার সাজে সাজবেন। পুরুষের গায়ে থাকবে অনুরূপ রং-নকশার পাঞ্জাবি। অনেকের মাথায় শোভা পাবে লাল-সবুজ জাতীয় পতাকার ছাপ দেওয়া ব্যান্ড। তাঁরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের গান শুনে, আনন্দ শোভাযাত্রায় পায়ে পা মিলিয়ে, ঘুরে-ফিরে বেড়িয়ে, আড্ডা দিয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করে ঘরে ফিরবেন।

বেড়ানো আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়াতেও আজ সবাই বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা রকমের পদগুলো রান্নায় সচেষ্ট হবেন। সকালের নাশতা বা দুপুরের ভোজে অনেকের পাতে উঠবে পান্তাভাত আর ইলিশ ভাজা। সঙ্গে থাকবে হরেক রকমের ভর্তা-ভাজি, ডাল, ঘন্ট, টক-ঝাল, ঝোলের সুস্বাদু ব্যঞ্জন। বাদ পড়বে না মিষ্টিও।

পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত প্রতিটি বাঙালি দিনটিকে নববর্ষ হিসেবে পালন করে। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন প্রাণের উৎসব। এই উৎসবের রং একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়তে বাঙালি জাতিকে এগিয়ে নিয়েছে বারবার। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচারের অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে।

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা; যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেসকোর ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে’র মর্যাদা পায়। এ মর্যাদা দেওয়ায় আমরা গৌরববোধ করি। পহেলা বৈশাখ তাই কেবল একটি তারিখ নয়, বাঙালির উৎসবের দিন।

বৈশাখী মেলার অন্যতম বিনোদনমূলক দিক হলো লোকসংগীত ও নাট্য আয়োজন। মেলায় বাউল গান, কবিগান, যাত্রাপালা, গম্ভীরা, পুঁথিপাঠ, পালাগান ও পুতুল নাচ পরিবেশিত হয়। শিশুদের জন্য থাকে নাগরদোলা, সার্কাস ও বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থা। এসব আয়োজন শুধু বিনোদনই দেয় না, বরং নতুন প্রজন্মকে তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে পহেলা বৈশাখের গুরুত্ব অনন্য। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে বাঙালিরা যে প্রত্যয় নিয়েছে, তার প্রতিফলন দেখা যাবে এই বৈশাখি মিলনমেলায়।

নিরাপত্তা জোরদার : বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান। তিনি বলেছেন, নববর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছি। আশা করি উৎসবটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে। বৈশাখী উৎসবকে ঘিরে অপপ্রচার রোধ করতে সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। নববর্ষের উৎসবকে কেন্দ্র করে ইভটিজিং যাতে না হয়, সেজন্য সতর্ক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।